Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশে ভিটামিন ডি এর অভাব অত্যন্ত উদ্বেগজনকঃ ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণে কিছু নীতিমালা

নাসিমা সুলতানা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক); ফারহানা হাবীব, ফয়েজ আহমেদ, উৎপল রায়, রিচার্ড ডিলানি, ভাইটাল স্ট্রাটিজিস

 

ভূমিকা

হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং জীবন মানের জন্য “ভিটামিন ডি” কে একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এবং ভিটামিন ডি এর অভাবে বিভিন্ন মারাত্মক অসুখ হতে পারে, যেমন রিকেটস, হাড়ের বিকৃত গঠন, অস্টিওম্যালেসিয়া এবং ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক রোগ ইত্যাদিও হতে পারে। ভিটামিন ডি এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল ত্বকের ওপর সূর্যালোকের প্রভাব। এছাড়াও তৈলাক্ত মাছ, লাল মাংস, কলিজা, ডিমের কুসুম, বিভিন্ন রকমের সিরিয়াল, ভিটামিন ডি এর উত্তম উৎস। বলা হয়ে থাকে, সাধারনত সকলের (শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক, গর্ভবতী মহিলা, এবং স্তন্যদানকারী মা-সহ) ঘাটতি পূরণে প্রতিদিন মাত্র ১০ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন।

একটি বৈশ্বিক সমস্যা

ভিটামিন ডি এর অভাব জনিত সমস্যা শুধুমাত্র দরিদ্র দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ, তা কিন্তু নয় বরং এটি একটি বিশ্বজোড়া সমস্যা। প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেমন ভারত, পাকিস্তান এবং সৌদি আরবে নারী পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন বয়স এবং আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে গবেষণা চালানো হয়েছে যেখানে দেখা গেছে ভিটামিন ডি এর অভাব ভারতে ৫৯% সৌদি আরবে ৬০% এবং পাকিস্তানে ৭৩%। পুরো ইউরোপেই এই সমস্যাটি খুবই সচরাচরদৃষ্ট, উত্তরাংশে <২০% এবং বাকি অংশগুলোতে ৩০-৬০% মানুষের মধ্যে ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা যায়। কয়েকটি দেশের ভিটামিন ডি এর অপ্রতুলতার হার টেবিল-১ এ দেখানো হল।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি

বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও এই দিকটি উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত বলে বাংলাদেশ প্রচুর রৌদ্রালোক পায়। কিন্তু তারপরেও ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকার পেছনে অন্যান্য ফ্যাক্টর নিশ্চয় রয়েছে। একটি হিসেবে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রায় ৮০% শিশু ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ১-৬ মাস বয়সী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশই ভিটামিন ডি এর অভাবে ভুগছে। শূণ্য থেকে এক বছর বয়সী ৩১.৯% শিশুদের রক্তে ২৫ হাইড্রক্সি ভিটামিনের মাত্রা ডেফিশিয়েন্ট অর্থাৎ ২০ ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটারের নিচে এবং ৫২.২% শিশুদের মাঝে ইন্সাফিশিয়েন্ট অর্থাৎ ২০-৩০ ন্যানোগ্রাম/মিলিলিটার। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে ডেফিশিয়েন্ট এবং ইন্সাফিশিয়েন্ট এর হার যথাক্রমে ৩৮.২% এবং ৫০%। উপরন্তু দেখা গিয়েছে, ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের মাঝে এই ডেফিশিয়েন্সি ৪৬.৮% এবং ইন্সাফিশিয়েন্সি ৫১.৯%। ''বাংলাদেশী জনগণের মাঝে ভিটামিন ডি এর অবস্থা'' নামক একটি গবেষণা বলছে, ৮৬% মানুষের হাইপোভিটামিনোসিস ডি রয়েছে।

''বাংলাদেশি জনগণের ভিটামিন ডি এর অভাব এবং আর্থসামাজিক অবস্থা'' নামক আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, নিম্ন আর্থসামাজিক অবস্থার ৫০% মহিলার হাইপোভিটামিনোসিস ডি রয়েছে, যেখানে উচ্চ আর্থসামাজিক অবস্থায় এই হার ৩৮%। টেবিল-২ এ আরেকটি গবেষণা যার শিরোনাম “বাংলাদেশী জনগনের ভিটামিন ডি এর অবস্থাঃ একটি পরীক্ষাগার-ভিত্তিক গবেষণা''  ৭৯৩টি প্লাজমা নমুনার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত ফলাফল দেখানো হয়েছে।

ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন দেশের পদক্ষেপ

যদিও বাংলাদেশ তার জনগোষ্ঠীর ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণে কাজ করছে কিন্তু তারপরেও নীতিমালা এবং প্রায়োগিক বিষয় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন পাঁচ বছরের নিচের শিশু, গর্ভবতী মহিলা, কিশোর কিশোরী, প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট নয়। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন দেশে গৃহীত সর্বোত্তম পন্থাগুলোর দিকে তাকালে আমরা কিছুটা নির্দেশনা পেতে পারি।

তুরস্ক: সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিশুদের জন্য ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট পৌঁছে দেয়া এবং ‘রৌদ্রালোক এই অভাব দূর করতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ’ ভিটামিন ডি এর অভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির উদ্দ্যেশ্যে সে বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রচারণা চালান।

নেদারল্যান্ডস: চার বছরের কম বয়সী শিশুদের ভিটামিন ডি ড্রপ খাওয়ানো। 

সৌদি আরব: প্রতি কেজি ময়দায় ১৩.৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি দিয়ে ফর্টিফিকেশন।

কানাডা: ভিটামিন ডি দিয়ে খাবার ফর্টিফিকেশন (যা ৬০% চাহিদা পূরণ করে)।

যুক্তরাষ্ট্র: প্রতি লিটার ভেজিটেবল অয়েল ১৩.৮ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি দিয়ে ফর্টিফিকেশন।

নীতির নির্দেশনা এবং উপসংহার

অনেক মানুষ ভিটামিন ডি এর অভাবে গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যা কিনা জীবনযাত্রার মান এবং আর্থসামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটাচ্ছে। রৌদ্রালোকে অবস্থান  নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারন খুজে বের করতে সুগভীর গবেষণা প্রয়োজন। যথাযথ খাদ্য গ্রহণ, খাবারে ভিটামিন ডি যোগ করা বা ফর্টিফিকেশন, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সরবরাহ  নিশ্চিত করাসহ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতাই পারে ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে।

বাংলাদেশের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে এখানে কিছু নীতি এবং প্রায়োগিক বিষয় উল্লেখ করা হলো:

  • গর্ভবতী মহিলা, স্তন্যদানকারী মা, সদ্যজাত শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক মানুষের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণের জন্য কিছু দিক নির্দেশনা তৈরি করা।

  • ভিটামিন ডি এর উৎস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী এবং মানুষের আচার-ব্যবহার পরিবর্তনের জন্য প্রচারণা বাড়ানো।

  • ভিটামিন ডি এর সকল উৎস (মাছ,ডিম এবং কড লিভার অয়েল) এর সহজলভ্যতা এবং সহজপ্রাপ্যতা বৃদ্ধি।

  • শহর অঞ্চলকে বিশেষ দৃষ্টিতে রেখে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সরবরাহ করা।

  • ভিটামিন ডি এর উৎস বৃদ্ধি করার জন্য সাপ্লিমেন্টেশন এবং ফর্টিফিকেশন এর উপর জোর দেয়া।