ইকবাল আনসারী খান, র্যাম্পস, বাংলাদেশ
E-mail: iqbalansary@gmail.com
ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্স বা অতীব জরুরী ঘটনার নথি বন্ধন অর্থাৎ কোন দেশের জনগণের জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদির তথ্য নিবন্ধন/রিপোর্টিং, নথিভূক্তকরণ/রেজিস্ট্রেশন, তথ্য সংরক্ষণ একটি দেশের স্বাস্থ্য এবং উন্নয়নের জন্য চর্চা করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সরকার ব্লুমবার্গ ফিল্যান্থ্রোপিসের ডেটা ফর হেলথ ইনিশিয়েটিভের সহযোগিতায় ২০১৫ সাল থেকে/জনসংখ্যা বিষয়ক তথ্য নথিভূক্তকরণ/সিভিল রেজিস্ট্রেশন এবং ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক্স সিআরভিএস-এর কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার সিআরভিএস-কে "দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত" অধিকার, সুরক্ষা, প্রাপ্যতা এবং পরিষেবার ভিত্তি হিসাবে দেখে এবং জনসংখ্যার উন্নতির জন্য প্রমাণ ভিত্তিক নীতি প্রণয়নের জন্য সেগুলি ব্যবহার করতে চায়, তবে এটির বাস্তবায়ন এখনও উদীয়মান পর্যায়ে রয়েছে। উন্নত বিশ্বে সিআরভিএস থেকে প্রাপ্ত তথ্য জনসংখ্যার স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বদা ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এই সকল ব্যবস্থাপনার অপ্রতুলতার কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তথ্যাদি ব্যবহার সম্ভব হয় না এবং দূর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে জনগণের উন্নয়ন বিলম্বিত হয়। মহামারী চলাকালীন সময়ে সীমিত চলাচলের কারণে এই অপ্রতুলতা সেসব দেশের জনগণের ভোগান্তিকে আরও দীর্ঘায়িত করেছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের সম্প্রসারণের ফলে, মোবাইল ফোনভিত্তিক জরিপগুলি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কিন্তু এখনও মৃত্যুহার নজরদারির জন্য উল্লেখযোগ্য হারে ব্যবহার করা হচ্ছে না। উপরন্তু, জরিপগুলি উত্তরদাতাদের সাথে মুখোমুখি যোগাযোগ ছাড়াই পরিচালিত হয় বলে, বিশেষ সময়ে যেমন, মহামারী বা মানবিক সংকটের সময়ে যখন সাক্ষাৎকারকারীদের চলা ফেরায় প্রতিবন্ধকতা থাকে, তখন এই মাধ্যমটি বিশেষ ভাবে উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
র্যাপিড মর্ট্যালিটি মোবাইল ফোন সার্ভেস (র্যাম্পস) হল একটি বহুজাতিক গবেষণা প্রকল্প যেখানে ইনস্টিটিউট অফ ইপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের কারিগরি সহায়তায় দেশব্যাপী সমীক্ষা চালাচ্ছে। যেখানে উপযুক্ত বিকল্পের অভাব রয়েছে সেখানে নিরাপদে সময়মত (অতিরিক্ত) মৃত্যুর তথ্য ভান্ডার তৈরি করার জন্য একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসাবে র্যাম্পস প্রতিষ্ঠা করা এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
র্যাম্পস বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হল-
১। একটি মৃত্যুর নজরদারি পদ্ধতি হিসাবে র্যাম্পস-এর সম্ভাব্যতা এবং ব্যয় কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য একটি জাতীয় স্তরের মৃত্যুহার জরিপ পরিচালনা করা।
২। জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা ব্যবহার করে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে অতিরিক্ত মৃত্যুর হার অনুমান করা।
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের) জনসংখ্যার সম্মতিক্রমে মোবাইল ফোন ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে র্যাম্পস ডেটা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি আইইডিসিআর কল সেন্টার ব্যবহার করে র্যান্ডম ডিজিট ডায়ালিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত একটি আদর্শ প্রশ্নমালা ব্যবহার করছে। এই সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলীর প্রধান উপাদানগুলি কোভিড-১৯ এর আগে এবং পরবর্তী সময়ে পরিবারের সদস্য, পিতামাতা এবং ভাইবোনের মৃত্যুর সংখ্যা; এবং টিকা না নেওয়া বা অনীহার অন্তর্ভূক্ত জনগোষ্ঠির কারণ সমূহ নির্ণয় করা; কোভিড টিকার কভারেজ, মোবাইল ফোনের মালিকানা বিষয়ে তথ্যাদি সংগ্রহ করা।
আইইডিসিআর এই জরিপ সম্পূর্ণ করতে পাঁচ থেকে ছয় মাসে মোট ২৫০০০ তথ্য সংগ্রহের জন্য এই সাক্ষাৎকার চালাবে। বয়স, লিঙ্গ এবং আবাসিক বৈশিষ্ট্যগুলির উপর ভিত্তি করে এরকম জনপ্রতিনিধিত্বমূলক জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা প্রকাশের জন্য, যোগ্য ও সম্ভাব্য উত্তরদাতাদের স্ক্রিনিং যেভাবে বিবেচনায় আনা হয়েছে তা (টেবিল-১) এ দেখানো হল।
র্যাম্পস পদ্ধতি ও সামগ্রী প্রতিষ্ঠা করার উপযোগিতা শুধুমাত্র কোভিড-১৯ কালীন নিরাপদে সময়মত (অতিরিক্ত) মৃত্যুর তথ্য ভান্ডার তৈরি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যমান মৃত্যুহার নজরদারি ব্যবস্থা এবং খানাকেন্দ্রিক সমীক্ষায় র্যাম্পস একটি সুলভ বিকল্প হিসাবে কাজ করতে পারে বা মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের পরিপূরক হতে পারে। উপরন্তু, র্যাম্পস ব্যবস্থা আনুমানিক মৃত্যুহার নিরূপণে একটি অস্থায়ী সমাধান হিসাবে কাজ করতে পারে যেখানে মুখোমুখি তথ্য সংগ্রহের কাজ কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। এছাড়া এই পদ্ধতি কার্যকরী ও প্রয়োগযোগ্য প্রমানিত হলে এটিকে ভবিষ্যতে একটি অনন্য স্বাধীন তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
**বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, ইউনিসেফ আমেরিকার মাধ্যমে এই প্রকল্পের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে।