Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশে নিপাহ এনকেফালাইটিস নজরদারি কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা

 

ডা. শারমিন সুলতানা, আইইডিসিআর

E-mail: dr.sharmin1579@yahoo.com

মস্তিষ্কে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ বা এনকেফেলাইটিস একটি জুনোটিক বা প্রাণীবাহিত রোগ। ফলখেকো বাদুড় এর রিজার্ভেয়র বা প্রাথমিক আশ্রয়দাতা। মালয়েশিয়ায় আক্রান্ত শুকরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা মানুষদের মারাত্মক এনকেফেলাইটিস বা মস্তিস্ক প্রদাহ দেখা দেয়। ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রথম বার মানুষের মাঝে নিপাহ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, যেখানে ২৮৩ জন শনাক্ত হয় এবং ১০৯ জন মারা যায়। বাংলাদেশে ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসজনিত এনকেফেলাইটিস শনাক্ত করা হয় এবং ২০০৪ সালে এর সংক্রমণের পথ হিসেবে বাদুড়ের লালা দ্বারা সংক্রমিত খেজুরের কাঁচা রস পান করাকে চিহ্নিত করা হয়। তখন থেকে প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশে এই রোগ দেখা যাচ্ছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও এর সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করা এবং রোগ বিস্তার শনাক্ত করার জন্য হাসপাতাল ভিত্তিক একটি নজরদারি কার্যক্রম শুরু হয়। এই প্রবন্ধটিতে নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি ও সংক্রমণের পথ চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে, নজরদারী থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ও অন্যান্য গবেষণা কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে আটটি বিভাগের ৮টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চিত্র ১ দ্রষ্টব্য) এই নজরদারি ব্যবস্থা চালু আছে। এই হাসপাতাল ভিত্তিক নজরদারি ছাড়াও ইনস্টিটিউট অফ ইপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ-(আইইডিসিআর), হটলাইন নম্বর ও মিডিয়া বা গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ইভেন্ট বেইজড বা ঘটনা ভিত্তিক নজরদারি ব্যবস্থা চালু রেখেছে। হটলাইন নম্বর ও গণমাধ্যম থেকে পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত তথ্য আইইডিসিআর প্রথমে যাচাই করে তারপর যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎপর হয়।

নিপাহ ভাইরাস নজরদারিতে জাতীয় নির্দেশিকা অনুসারে কেস বা রোগাক্রান্তকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। নিপাহ ভাইরাসের দুই ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসা মানুষকে দুইভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। প্রথম সংজ্ঞাটি হল ‘যে কোন হাসপাতালে ভর্তি রোগী যার সাম্প্রতিক জ্বরের ইতিহাস আছে এবং বগলের তাপমাত্রা ৩৮.৫০ সেন্টিগ্রেডের বেশি এবং মস্তিষ্কের প্রদাহের প্রমাণ আছে যেমন-মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, নতুন করে শুরু হওয়া খিঁচুনি বা মস্তিষ্কে নতুন কোনো সমস্যা যা হয়তো শুধুই মস্তিষ্কে সীমাবদ্ধ কিংবা ছড়িয়ে পড়েছে এমন’। আরেকটি সংজ্ঞা হল ‘যে রোগীর বিগত সাত দিনের বেশী সময় ধরে অসুস্থ যেমন, জ্বর আছে (বগলের তাপমাত্রা ৩৮.৫০ সেন্টিগ্রেডের বেশি), শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে, শ্বাসকষ্ট এমন যে  সাহায্য ছাড়া দশ কদম হাঁটতে রোগীর কষ্ট হয় এবং বুকের এক্সরেতে সমস্ত ফুসফুস জুড়ে তীব্র সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ দেখা যায়’। উপরোক্ত সংজ্ঞায় অন্তর্ভূক্ত রোগীদের কাছ থেকে রক্ত, মস্তিষ্কের রস এবং গলার শ্লেষা পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। এসকল নমুনা থেকে ভাইরাসের নিউক্লিক এ্যাসিড শনাক্ত করার জন্য পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা পিসিআর পরীক্ষা করা হয় এবং নিপাহ ভাইরাসের বিরুদ্ধে দেহে আইজিএম এবং আইজিজি এন্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য রক্তরসের এনজাইম লিংকড ইমিউনোসর্বেন্ট এ্যাসে বা এলেইজা পরীক্ষা করা হয়। যদি কোন কেস শনাক্ত হয় অথবা কোনো প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তাহলে কাঠামোবদ্ধ একটি প্রশ্নমালার সাহায্যে কেসের তথ্যানুসন্ধান করা হয়।

২০০১ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ২০টি জেলায় নিপাহ শনাক্ত করা হয়। যার বেশিরভাগ এলাকাগুলোই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। যদিও শুরুর দিকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ২০টি জেলাতে নিপাহ সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে এই ২০টি জেলার বাইরেও অনেক জেলায় নিপাহ আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। ফলাফল স্বরূপ ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৩২টি জেলায় নিপাহ কেস শনাক্ত করা গেছে। সর্বোচ্চ সংখ্যক কেস পাওয়া যায় ফরিদপুরে (৭১টি), তারপর রাজবাড়ীতে (৩০টি), নওগাঁয় (২৫টি) এবং লালমনিরহাট জেলায় (২৪টি) (চিত্র ২ দ্রষ্টব্য)।

ক্রমানুসারে ২০০১ সালের মে মাসে বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলায় প্রথম নিপাহ কেস শনাক্ত হওয়ার পর ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে নওগাঁ জেলায় দ্বিতীয়বার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মোট ৩২২টি নিপাহ কেস শনাক্ত করা হয় যার মধ্যে ২২৯জন (৭১%) মৃত্যুবরণ করেছে (চিত্র ৩ দ্রষ্টব্য)।

সংক্রমণের প্রাথমিক উৎস হিসেবে ফলখেকো বাদুড়ের লালা দ্বারা দূষিত কাঁচা খেজুরের রসকেই দায়ী করা হয়। খেজুরের কাঁচা দূষিত রস পানের মাধ্যমে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর মানুষে মানুষে সংস্পশের্র মাধ্যমে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। ৪৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি ইনফেকশন অর্থাৎ দ্বিতীয় ধাপে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে (>১৫মিনিট) সংক্রমিত রোগীর দেহরসের সংস্পর্শে থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীরা অন্যদের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে, নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছিল অসুস্থ শুকরের সংস্পর্শ, অন্যদিকে বাংলাদেশে  কাঁচা খেজুরের দূষিত রস এবং আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসাকে ঝুঁকির কারণ হিসেবে ধরা হয়। বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পানীয় ‘তাড়ি’কে (যা কাঁচা খেজুরের রস গেঁজানোর মাধ্যমে তৈরি করা হয়), ২০১১ সালের পর নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের আরেকটি ঝুঁকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ২০১৯ সালের একটি প্রাদুর্ভাবের সময় আক্রান্ত রোগীর দ্রুত মৃত্যুর কারণে রোগের প্রাথমিক উৎস চিহ্নিত করা যায়নি (টেবিল ১ দ্রষ্টব্য)। তাই দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য শক্তিশালী নজরদারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ২২টি জেলায় রোগ শনাক্ত করা হয়েছিল, ২০১১-এর পরে আরও দশটি জেলায় রোগী শনাক্ত হয়, অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত জেলার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে (টেবিল ২ দ্রষ্টব্য)।

 

 

নিপাহ রোগের প্রাদুর্ভাব এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করার জন্য একটি সক্রিয় এবং ইভেন্ট বেইজড নজরদারী ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু নজরদারি ব্যবস্থা ভাইরাসজনিত রোগতত্ত্ব এবং রোগপ্রক্রিয়া তত্ত্বানুসন্ধান করে, তাই মূলত যেসকল এলাকায় রোগীর সংখ্যা কম অথবা অল্প সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে সে সকল এলাকায় রোগের ঝুঁকির কারণ এবং সংক্রমণের পদ্ধতি অনুসন্ধান করার জন্য ব্যাপক ও নিবিড় নজরদারি প্রয়োজন।

Referances:

1. Chua KB. Nipah virus outbreak in Malaysia. J Clin Virol. 2003;26(3):265–75.

2. Centers for Disease Control and Prevention (CDC. Update: outbreak of Nipah virus--Malaysia and Singapore, 1999. MMWR Morb Mortal Wkly Rep. 1999;48(16):335–7.

3. WHO. 2018 Annual review of diseases prioritized under the Research and Development Blueprint. 2018;

4. Rahman M, Chakraborty A. Nipah virus outbreaks in Bangladesh: a deadly infectious disease. WHO South-East Asia J Public Health. 2012;1(2):208.

5. Hsu VP, Hossain MJ, Parashar UD, Ali MM, Ksiazek TG, Kuzmin I, et al. Nipah virus encephalitis reemergence, Bangladesh. Emerg Infect Dis. 2004;10(12):2082.

6. Rahman MA, Hossain MJ, Sultana S, Homaira N, Khan SU, Rahman M, et al. Date palm sap linked to Nipah virus outbreak in Bangladesh, 2008. Vector-Borne Zoonotic Dis. 2012;12(1):65–72.

7. Nikolay B, Salje H, Hossain MJ, Khan AD, Sazzad HM, Rahman M, et al. Transmission of Nipah virus—14 years of investigations in Bangladesh. N Engl J Med. 2019;380(19):1804–14.

8. Islam MS, Sazzad HM, Satter SM, Sultana S, Hossain MJ, Hasan M, et al. Nipah virus transmission from bats to humans associated with drinking traditional liquor made from date palm sap, Bangladesh, 2011–2014. Emerg Infect Dis. 2016;22(4):664.