Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৩১st মার্চ ২০২৪

বাংলাদেশের সরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ক্যান্সার রোগীর চিত্রঃ ক্যান্সার রোগীর জনসংখ্যার উপাত্তের একটি বর্ণনামূলক বিশ্লেষণ

ডাঃ অনির্বাণ সরকার, ডাঃ মাহফুজ বিন তাসিক, ডাঃ নুসায়ের চৌধুরী, ডাঃ আফরিনা মাহমুদ, ফারহানা হাবিব, জুলিয়েটা লোমেলিন গ্যাসকন, ডাঃ শাহ আলী আকবর আশরাফি,ফয়েজ আহমেদ;

ডিজিএইচএস, এমআইএস,ডিজিএইচএস; এনসিডিসি,ডিজিএইচএস; ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস,ডিজিএইচএস; ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস;

 

মূল বার্তা

  • গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে সরকারী হাসপাতাল গুলোতে ক্যান্সার রোগী ভর্তির হার বেড়েছে। এর মাঝে পরিপাকতন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং ইন্ট্রাথোরাসিক অঙ্গগুলিতে ক্যান্সারের রোগীই বেশী।
  • যেসব জেলায় সরকারী হাসপাতালে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ক্যান্সার রোগী ভর্তি রয়েছে তার মধ্যে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ জেলা অন্যতম।
  • বাংলাদেশে ক্যান্সারের অবস্থা পুরোপুরি বুঝতে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যাগুলির সমাধান করতে একটি জাতীয় ক্যান্সার রেজিস্ট্রি সিস্টেম থাকা অপরিহার্য।

 

 

পটভূমি

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস, ২০০৪) এর উপাত্ত অনুসারে ক্যান্সার বাংলাদেশে মৃত্যুর ষষ্ঠতম কারণ এবং এটি বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি, ২০০৮) অনুমান করেছে যে বাংলাদেশে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার ২০০৫ সালে ৭.৫% থেকে বেড়ে ২০৩০ সালে ১৩% এ বৃদ্ধি পাবে। পুরুষদের ক্যান্সারের প্রধান দুটি কারণ হল ফুসফুস এবং মুখের ক্যান্সার এবং মহিলাদের স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার।  বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার এর রোগী বৃদ্ধিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বার্ধক্য সহ বিভিন্ন কারণ অবদান রাখে। অন্যান্য কারণের মাঝে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শারীরিক কার্যকলাপ, খাদ্য এবং পুষ্টি হতে পারে। ক্যান্সার রোগী বৃদ্ধির অন্তর্নিহিত কারণগুলি জানার জন্য ক্যান্সারের প্রবণতা ও ধরণগুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যবশত ডেটার কভারেজ এবং গুণমান খুবই সীমিত এবং আইএআরসিএস সহ বেশিরভাগ ডেটা অনুমান ভিত্তিক। এজন্য এই অনুমানগুলি ব্যাখ্যা করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। বিশ্বে ৭০০ টিরও বেশি “ক্যান্সার রেজিস্ট্রি” রয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা—ভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রিগুলি বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ২১% কে কভার করে, যার মাঝে সর্বনিম্ন এশিয়ায় (মোট জনসংখ্যার ৮%) এবং আফ্রিকায় (১১%)।  বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত “ক্যান্সার রেজিস্ট্রি” বা নজরদারি ব্যবস্থা নেই। অতএব, এই গবেষণার লক্ষ্য হল বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতাল গুলিতে ভর্তি হওয়া ক্যান্সার রোগীদের ডেমোগ্রাফিক তথ্য এবং ক্যান্সারের প্রকারগুলি বিশ্লেষণ করা।

 

পদ্ধতি

২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ক্যান্সার রোগীদের উপাত্ত ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (MIS) ডাটাবেসের DHIS2 (ডিস্ট্রিক্ট হেলথ ইনফরমেশন সফ্টওয়্যার) থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে যা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস (DGHS) এর অধীনে রয়েছে।

 

প্রাপ্ত ফলাফল

২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালগুলিতে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির হার ৭৪% বৃদ্ধি পেয়েছে (চিত্র ১)। ২০২২ সালে, চিকিৎসার জন্য ভর্তি হওয়া ক্যান্সার রোগীদের বেশিরভাগই পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারের রোগী। এরপরেই রয়েছে ইন্ট্রাথোরাসিক এবং শ্বাসযন্ত্রের ক্যান্সার। তবে এরপর সবচেয়ে বেশী ক্যান্সার রোগীর উৎস ও কারণ অজানা। (চিত্র ২) ।

 

সামগ্রিকভাবে (সকল ধরণের ক্যান্সার এবং সকল বয়সে) পুরুষ ক্যান্সার রোগী মহিলাদের তুলনায় বেশি ভর্তি হয়েছে। তবে হাড় এবং ত্বকের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মহিলারা ১.৭১ গুণ বেশী ভর্তি হয়েছে (চিত্র ৩) ।

বয়স্ক ক্যান্সার রোগীদের সরকারি হাসপাতাল গুলিতে ভর্তির হার বেশি এবং ৬০—৬৯ বছর বয়সী রোগীদের প্রতি ১০০,০০০ জনসংখ্যায় ভর্তির হার সবচেয়ে বেশি (চিত্র ৪)। এলাকা ভিত্তিক ক্যান্সার রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে শীর্ষ ৩টি জেলা ছিল সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ, যেখানে প্রতি ১০০,০০০ জনসংখ্যায় যথাক্রমে ২৪৫.১, ১৭৯.২ এবং ১০৮.৩ জন ভর্তি হয়েছে। (চিত্র ৫)।

 

 

সীমাবদ্ধতা

১. বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলি এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত নয়। সেকারণে এখানে সমগ্র দৃশ্যপট প্রতিফলিত নাও হতে পারে।

২. এখানে সরকারী হাসপাতালের প্যাসিভ ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে। সুতরাং, ক্যান্সার রোগীদের ভৌগলিক বন্টন বাস্তব দৃশ্যের সদৃশ নাও হতে পারে।

 

উপসংহার

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্যান্সার রোগে ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভর্তি রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সিলেটে, এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ জেলায়। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে প্রবীণ এবং পুরুষ রোগীরাই অধিক। সময়ের সাথে সাথে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের উচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

সুপারিশ সমূহ

১. “দেশব্যাপী ক্যান্সার রেজিস্ট্রি” শক্তিশালী করা

২. সরকারি হাসপাতাল গুলির মধ্যে নেটওয়ার্কিং স্থাপন করা। এছাড়াও, সরকারী এবং বেসরকারী হাসপাতালের মাঝেও সমন্বয় স্থাপন করতে হবে

৩. বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সুতরাং, প্রাথমিক সনাক্তকরণের জন্য ক্যান্সার স্ক্রীনিং সিস্টেম অপরিহার্য

৪. ভর্তি হওয়া ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে পরিপাকতন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র এবং ইন্ট্রাথোরাসিক অঙ্গের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যেমন গণ সচেতনতা, মানুষের আচরণ পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি

 

# পরিকল্পনা ও গবেষণা, স্বাস্থ্য পরিষেবা অধিদপ্তর এবং ডিজিএইচএস অ্যাডভান্স ডেটা বিশ্লেষণমূলক উদ্যোগের অধীনে তৈরী। ডেটা ইমপ্যাক্ট, ব্লুমবার্গ ডেটা ফর হেলথ ইনিশিয়েটিভস, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, ডিজিএইচএস এর সাহায্যপুষ্ট।