Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

২০২০ সালে বাংলাদেশে শিশুদের মাঝে কোভিড সংক্রণের অবস্থা

মাহমুদ কমল, মাছরাঙা টেলিভিশন

 

 

সংক্রমণের শুরু যেভাবেঃ

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার শুরুর দিকে দেখা গিয়েছে অনেক বাবা-মা (বিশেষ করে বিদেশ ফেরত বা প্রবাসী আত্মীয় আছে) তাদের সন্তানের বা পরিবারের অন্য সদস্যদের অসুস্থতা সংক্রান্ত অথবা বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে আসার তথ্য গোপন করেছেন। এসবের খেসারতও তাদের দিতে হয়েছে। কোয়ারেন্টিন কিংবা আইসোলেশন সঠিকভাবে না মানায় পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে।

সংক্রমণের শুরুর দিকে শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কম মনে করা হলেও পরবর্তীতে ঢাকা শিশু হাসপাতালের তথ্যে উঠে এসেছে শিশুদেরও করোনা সংক্রমণ হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এমনকি কোনো ধরনের উপসর্গ না থাকলেও পরীক্ষা করে দেখা গেছে অনেক শিশুই সংক্রমিত হয়েছে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে।

গেল বছরের ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর, ওই চারদিনে মোট ১২৭টি শিশুর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭১ জনের শরীরেই পাওয়া গেছে করোনা সংক্রমণ, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৫৬ শতাংশ। আর একই বছরে এপ্রিল থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৩১৩৭টি শিশুর নমুনা পরীক্ষায় ৪১৪ জনের মধ্যে এই সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এই শিশুদের প্রায় ৬৩%  ভুগছিল অপুষ্টিতেও। এদের মধ্যে ১৩টি শিশু মারা যায় এবং বেশিরভাগ শিশুই ছিল উপসর্গহীন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, যদিও শিশুদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম, কিন্তু পরিবারের বড় সদস্যরা যারা বাইরে গিয়ে রোগ ঘরে বয়ে আনছেন, তাদের মাধ্যমেই শিশুরা সংক্রমিত হচ্ছে।

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক যৌথ গবেষণাতেও শিশুদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। ওই হাসপাতালে ২৯শে মার্চ থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত যে নবজাতকরা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিল তাদের মধ্যে ৮৩জন এর নমুনা পরীক্ষা করে ২৬জন শিশুর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। এদের সর্বোচ্চ বয়স ছিল মাত্র আট দিন। ওই গবেষণায় দেখা গেছে আক্রান্ত নবজাতকদের বড় অংশই ছিল উপসর্গহীন। এই পরিস্থিতিতে শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাবের পরিষ্কার চিত্র বুঝতে হলে আরও ব্যাপক পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিংকর ঘোষ (ঢাকা শিশু হাসপাতাল) বলেছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরু থেকেই শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। তিনি অধিকাংশ শিশুর মাঝে কোভিড-১৯ এর  কোন উপসর্গ না পাওয়ার কথা জানান। যেহেতু এখনও শিশুদের করোনা প্রতিরোধী টিকা আবিষ্কার বা কার্যকারিতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এটা ঘরের বড়দেরই দায়িত্ব আরও সতর্ক হওয়া যাতে নবজাতক ও শিশুরা নিরাপদে থাকে।

শিশুদের মাধ্যমে কি করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে?

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন শিশুদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা এবং তাদের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া নিয়ে পুরো বিশ্বের ৬৩৩২টি গবেষণা মূল্যায়ন করে দেখেছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে প্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তির তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫৬% কম। এছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও মারাত্মক অসুস্থ হওয়া বা মারা যাওয়ার ঝুঁকি শিশুদের কম থাকে। শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের হার কম হলেও তারা বাহক হিসেবে ভাইরাসের বিস্তার ঘটাতে পারে।

একই গবেষক দলের ভাইরাস সংক্রমণের ৩১ টি ক্লাস্টারের ওপর চালানো আরেক গবেষণায় দেখা যায় যে মাত্র তিনটি ক্লাস্টারে সংক্রমণ শিশুদের থেকে হয়েছে অর্থাৎ শিশুদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর হার ১০%। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহ্মিনা শিরীন বলেছেন, শিশুদের উপসর্গ যেহেতু কম তাই তাদের মাধ্যমে তীব্র ও জটিল সংক্রমণের সম্ভাবনাও কম।

তবে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটলে তা বোঝা কঠিন। কারণ তারা তাদের সমস্যগুলো অতটা গুছিয়ে বলতে পারেনা। তাই কোন বাবা-মা যদি কোনো কারণে সন্দেহ পোষণ করেন তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিশুদের জানানো অত্যন্ত জরুরীঃ

নিজে এবং অন্যকে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে চলেছেন বিশেষজ্ঞরা। টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সবাইকে। স্কুল না খুললেও যেহেতু ধীরে ধীরে সবাই নতুন স্বাভাবিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে তাই শপিংমল, দোকান, বেড়াতে যাওয়ার স্থানগুলোতে ধীরে ধীরে ভীড় বাড়ছে। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও এখন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে। তাই বড়দের স্বাস্থ্য বিধি মানার সঙ্গে শিশুদেরও সেগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিতে হবে। বাসার বড়দের লক্ষ্য রাখতে হবে যে শিশুরা যেন তাদের হাত ধোয়ার এবং স্যানিটাইজের অভ্যাস ধরে রাখে, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলে।

শিশুদের জানাতে হবে শরীরের কোথায় কোথায় হাত দেয়া যাবে না, প্রয়োজনীয় জিনিস যেন তেন ভাবে ফেলে রাখা যাবে না, কোথায় যাওয়া যাবে না, কি কি খাবার বেশি খেতে হবে, কোন কোন কাজ বেশি করতে হবে ইত্যাদি। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

শেষ কথাঃ

সবশেষে বলা যায় করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশের সরকার স্বাস্থ্য বিভাগসহ প্রত্যেকটি দপ্তর এবং প্রতিটি জনগণকে দায়িত্বশীল ভূমিকা সমান ভাবে পালন করতে হবে কারণ অদূর ভবিষ্যতে এই রোগের নতুন ঢেউ বা এ ধরনের সংক্রামক রোগের নতুন আক্রমণকে স্থানীয় কিংবা বৈশ্বিকভাবে যে আবার মোকাবেলা করতে হবে না তার নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবে না ।

 

** এই প্রবন্ধের সকল তথ্য ৩০ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সমসাময়িক।