Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মোবাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা

বিলকিস বানু জনস্বাস্থ্য বিভাগ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ঢাকা, বাংলাদেশ

 

 

বিপাকজনিত দীর্ঘমেয়াদী রোগ ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে দিন দিন বেড়ে চলেছে (২০১৩ সালে ৫.৫২% এবং ২০১৫ সালে ৭.৪%) প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস ও এর জটিলতার বিশাল ব্যয়ভার (২০১৩ সালে ৪১ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৫ সালে ৫১ মার্কিন ডলার) শুরুতেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। খাবার, ওষুধ, শারীরিক ব্যায়াম, নিয়মিত ফলোআপ পরীক্ষা, রক্তে শর্করা পরীক্ষা, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এড়িয়ে চলা এবং পায়ের যত্ন নেয়া ইত্যাদির সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত ডায়াবেটিস-আত্ম-যত্ন-ব্যবস্থাপনা (নিজে নিজের যত্ন নেয়া), গ্লাইসেমিক কন্ট্রোল বা শর্করা নিয়ন্ত্রণে এনে জটিলতাগুলো কমিয়ে জীবনমান উন্নত করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। লগবই সংযুক্ত ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় ৭টি উপাদান’-এর সচিত্র বই বিতরণ ও ব্যবহার করে রোগ ব্যবস্থাপনায় যথাযথ শিক্ষাদান ডায়াবেটিস রোগীদের ভাল রাখার জন্য কার্যকরী। প্রথমবারের মত লগবই সংযুক্ত এই বইয়ের বাংলা সংস্করণ ব্যবহার করা হয়েছিল ‘ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষমতায়ন’ নামক একটি প্রকল্পের অধীনে। এই প্রকল্পে যৌথ অংশীদার ছিল হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট অব গ্লোবাল হেলথ্, হাইডেলবার্গ ইউনির্ভাসিটি, জার্মানী, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন এবং ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষাগত কিংবা আচরণগত পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে গৃহীত কার্যক্রমে মোবাইল ফোন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ডায়াবেটিক রোগীর ব্যবস্থাপনা ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ব্যবহার একটি প্রয়োজনীয় এবং স্বল্পব্যয়ী সমাধান। বাংলাদেশ স্বাচ্ছন্দে এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করতে পারে কারণ বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা এখন প্রায় ১৫ কোটি (বিটিআরসি উপাত্ত- ২০১৮)।

স্মার্ট মোবাইল ফোনের নানাবিধ ব্যবহার যেমন ক্ষুদে বার্তা, শব্দ সংকেত, সাক্ষাতের সময় স্মরণ করানোর কল, নানা ধরনের এ্যাপের ব্যবহার ডায়াবেটিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী উপকরণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্মার্টফোনের ব্যবহারিক প্রয়োগের মাঝে আছে ডায়াবেটিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, ক্লিনিক ও সাক্ষাতের সময় স্মরণ করানো, ওষুধ সেবন স্মরণ করানো, ইনসুলিন গ্রহণ, নিজে নিজে রক্তের শর্করা পর্যবেক্ষণ, খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং রোগীদের মাঝে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি।

রোগীদের দ্বারা স্মার্টফোনের সাধারণ ব্যবহারের আগেই কিন্তু রোগের ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারের শুদ্ধতা যাচাই করা, জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। অধিকন্তু স্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকরী পদ্ধতি চিহ্নিতকরণে প্রচলিত বনাম প্রযুক্তি নির্ভরতার তুলনামূলক গবেষণা করা দরকার। ডায়াবেটিস কেন্দ্রিক প্রচলিত বনাম যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রমের কার্যকারিতার উপর তুলনামূলক গবেষণা’ শিরোনামে একটি গবেষণা ‘ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পের অধীনে চলমান রয়েছে। এই গবেষণাটিও ‘ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় ৭টি উপাদান’ -এর উপর ভিত্তি করে তৈরী।

সারাবিশে^ ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পূর্বে উল্লেখিত সচিত্র বই এবং লগবই সহজলভ্য করতে এর ধারাবাহিকতায় ‘ডায়াবেটিক সেলফ-কেয়ার’ নামে একটি স্মার্টফোন এপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে, এই আত্ম-যত্ন-ব্যবস্থাপনায় ৭টি উপকরণ ভিত্তিক স্মার্টফোন এপ্লিকেশনটি বাংলাদেশসহ সারাবিশে^ ডায়াবেটিক রোগীদের কাছে পরিচিত করার কাজ চলছে। এই স্মার্টফোন এপ্লিকেশনের অন্তর্নিহিত ধারণাটি হল: “নিরবচ্ছিন্নভাবে স্মরণ এবং পর্যবেক্ষণ রোগীকে যথাযথভাবে ডায়াবেটিস আত্ম-ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে এবং মোবাইল অ্যাপ এই প্রক্রিয়াকে সহজতর করে তোলে”। কিন্তু এই এপ্লিকেশনের প্রতিবন্ধকতাগুলো হল- কারিগরি সমস্যা, রোগী এবং ইলেক্ট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ডের সমন্বয়হীনতা, ব্যয়ভার (ব্যয়বহুল স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ডেটা প্লান), কিছু মানুষের জন্য ব্যবহার অনুপযোগিতা (বয়োবৃদ্ধ, ইংরেজী না জানা, দৈহিক প্রতিবন্ধী, নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থা) ইত্যাদি। তাই স্মার্টফোন এপ্লিকেশন প্রচলনের আগে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের জোর সুপারিশ করা হচ্ছে। যাচাইয়ের পর, প্রয়োজনীয় পরিমার্জন শেষে গুগল প্লে সেন্টারে এটি প্রচলনের উদ্বোধনের সময় ব্যবহার নির্দেশিকা এবং এপ্লিকেশন সম্পর্কিত সকল তথ্যাদি বিতরণ করা যেতে পারে।