অধ্যাপক মামুনার রশীদ
বাংলাদেশ নারী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে এবং মাতৃমৃত্যু কমানোর জন্য এসডিজি এর অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে। ২০১০ সালে বহু আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মাতৃমৃত্যু হ্রাস করায় এমডিজি ৫-এ'র লক্ষ্য পূরণে অসাধারণ অগ্রগতির জন্য জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর দুটি শাখার (স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা) মাধ্যমে কাজ করে থাকে এবং পরিবার পরিকল্পনা পরিষেবা, গর্ভপাতের পরে দেখাশোনা, মূল এবং সমন্বিত জরুরী প্রসুতি সেবা, গর্ভকালীন সেবা, প্রসব পরবর্তী সেবা, মাসিক নিয়মিতকরণ, মা এবং নবজাতকের স্বাস্থ্য উদ্যোগ, কমিউনিটি ভিত্তিক দক্ষ প্রসব সাহায্যকারী এবং ধাত্রী, বাংলাদেশে জরায়ু এবং স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এবং প্রসবকালীন ফিসটুলা প্রোগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে নানাবিধ মাতৃসেবা কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করে থাকে।
১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু প্রতি দশ হাজারে ৫৭৪ থেকে কমে ১৬৯-এ দাঁড়িয়েছে। এই কমে আসা গর্ভনিরোধক ব্যবহারের প্রবণতা এবং উর্বরতা হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত (গর্ভনিরোধক ব্যবহারের হার : ১৯৯০ সালে ৪০% থেকে ২০১৪ সালে ৬২%; মোট উর্বরতা হার: ১৯৯০ সালে ৫ থকে কমে ২০১৪ সালে ২.৩)। বর্ধিত প্রসব সুবিধা (২০০০ সালে ৮% থেকে ২০১৪ সালে ৩৭%) এবং দক্ষ প্রসব সাহায্যকারীদের উপস্থিতিও (২০০০ সালে ১২% থেকে ২০১৭ সালে ৫৩%) এই অগ্রগতির সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে। ২০০০ এবং ২০১৪ এর মধ্যে, চারবারের বেশি গর্ভকালীন সেবা গ্রহণ এবং প্রসবের ২ দিনের মধ্যে প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহণের হার নিরবচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে (এএনসি ১১% বনাম ৩১%; পিএনসি ১৩% বনাম ৩২%)। স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক শিক্ষাগত প্রসার এই উন্নতিতে অবদান রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৫-২৪ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার ১৯৯১ সালে ৩৮% থেকে বেড়ে ২০১১ সালে ৮০% হয়েছে।
এইসব ইতিবাচক পরিবর্তন সত্ত্বেও, কিছু মূল চ্যালেঞ্জ এখনও বিরাজ করছে। আরও অগ্রগতি অর্জন এবং সেটি ত্বরান্বিত করার জন্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবাগুলোকে আরও সহজলভ্য করা, সকলের জন্য সুষম স্বাস্থ্য সেবা, দক্ষ প্রসব সাহায্যকারি এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সুবিধা বৃদ্ধি, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং অপুষ্টি কমাতে পুষ্টি বিষয়ক কর্মসূচির মূলধারায় দৃষ্টিপাতের পরামর্শ দেয়।
এনবিপিএইচ-এর এই সংখ্যাটি মূলত থিম ভিত্তিক এবং বাংলাদেশের মাতৃস্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের নারীদের যৌন স্বাস্থ্য, বয়সন্ধিকালের মাসিক চ্যালেঞ্জ, বাল্য বিবাহ, গর্ভনিরোধক ব্যবহার, জরুরী প্রসবকালীন পরিস্থিতিতে রক্ত পরিসঞ্চালন এবং প্রজনন অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আশা করা যায় এই সকল অতি জরুরী বিষয়ের সাফল্য এবং সমস্যার উপর আলোকপাত করবে।