অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, ডা. আহমেদ নওশের আলম, ডা. এএসএম আলমগীর, আইইডিসিআর
ক. বিশ্ব পরিস্থিতি
ডেঙ্গু আক্রমণ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, গত ৫০ বছর ধরে যা প্রায় ৩০ গুণ বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর তথ্যমতে বিশ্বে প্রায় ৪০% লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকায় বাস করে। এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আমেরিকা, আফ্রিকা ও ক্যারীবীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০টি দেশ এইরকম এলাকার মাঝে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ কোটি লোক এই রোগে আক্রান্ত হয় যার মাঝে ৫ লক্ষ হেমোরেজিক জ্বরে ভোগে আর ২২,০০০ মৃত্যুবরণ করে যাদের অধিকাংশই শিশু।
ডেঙ্গুর উপস্থিতি দেখা যায়:
● ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে (২৬শে মে ২০১৯) ৫৫০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে
● নেপালের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে গনমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে সেদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০০ জন (৮ জুলাই ২০১৯)
● শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে (২১ জুলাই ২০১৯) ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩৫২৬৭
● পাকিস্তানের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন বলছে সেখানে ২৫০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে (৩০ জুন ২০১৯)
● থাইল্যান্ডের ব্যুরো অব ইপিডেমিওলজি সূত্র বলছে এবছর ১৪ জুলাই পর্যন্ত ৪৯১৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছে, যার মাঝে মারা গেছে ৬৪ জন। দেশ জুড়ে ভাইরাসের মারাত্মক প্রকোপের কারণে থাইল্যান্ডে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
● ফিলিপাইনের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ, ইপিডেমিওলজি ব্যুরো জানাচ্ছে, জুনের ১৬ থেকে ২২ তারিখের মাঝে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৩৬১০ আর ১ জানুয়ারী থেকে ২২ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৯৮১৭৯ যার মাঝে মারা গেছে ৪২৮ জন।
এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে অস্ট্রেলিয়ায় এবছরে এ পর্যন্ত ৭০০ জন ডেঙ্গু রোগীর খবর পাওয়া গিয়েছে (২ জুলাই ২০১৯)
খ. বাংলাদেশে ডেঙ্গুর চিত্র
বাংলাদেশে ১৯৬৫ সালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় যা ‘ঢাকা জ্বর’ নামে নথিভুক্ত আছে। পরবর্তীতে ১৯৭৭-৭৮ এ বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জ্বরের খবর পাওয়া যায়। ১৯৯৬-৯৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৫৫ জন জ্বরের রোগী পরীক্ষা করে ১৩.৭%-এর মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়।
২০০০ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গু ও ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের বড় রকম প্রাদুর্ভাব ঘটে, তারপর থেকে প্রতিবছরই কিছু পরিমাণে ডেঙ্গু সংক্রমণ দেখা দেয়া, বাংলাদেশে প্রায় নিয়মিত হয়ে গিয়েছে। ২০০০ সালের প্রাদুর্ভাবের সময় ডিইএনভি-৩ এর প্রাধান্যসহ ৪ ধরনের সেরোটাইপের সংক্রমণই লক্ষ্য করা গেছে যা ২০০২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
পরবর্তী বছরগুলোতে অবশ্য ডিইএনভি-১ ও ডিইএনভি-২ এর উপস্থিতিই লক্ষ্য করা গেছে। ডিইএনভি-৩ এর পুনরাবির্ভাব দেখা যায় ২০১৭-তে।
উল্লেখযোগ্য হারে মৃত্যুসহ ডেঙ্গুর খবর পাওয়া গেছে ২০১৮-তে যা বিগত ১৫ বছরের তুলনায় আশঙ্কাজনক। আইইডিসিআর-এর তথ্যমতে এ বছর দুই বা ততোধিক সেরোটাইপের সহসংক্রমণ বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।