Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কমিউনিটি থেকে আক্রান্ত নিউমোনিয়ায় ৫ বছরের কম বয়সী বাংলাদেশী শিশু এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি সমূহ

ডা. চমন আরা, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ

 

 

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিশুর শ্বাসতন্ত্রজনিত অসুস্থতা বা মৃত্যুর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ স্থানীয়ভাবে বা লোকালয়ের মধ্যে থেকেই শিশুদের আক্রমনকারী নিউমোনিয়া (সিএপি)। সিএপি কে সংজ্ঞায়িত করা হয় এভাবে, গত ১৪ দিনের মাঝে যে শিশু, কোন হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি থাকেনি কিন্তু শ্বাসতন্ত্রের নীচের অংশ সংক্রমিত হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু যেখানে ক্ষুধা ও দারিদ্র প্রকট তারাই সবচাইতে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও বিশ্বজুড়ে গত দুই দশকে শিশুমৃত্যু কমেছে কিন্তু ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধানতম কারণ এখনো সিএপি।

প্রমাণ নির্ভর মান এবং নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক তীব্র সংক্রমণের সাথে ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টরের সংশ্লিষ্টতার শক্তি বিশ্লেষনার্থে একটি সাম্প্রতিক মেটা এনালাইসিস ভিত্তিক সিস্টেমিক রিভিউ গবেষণাপত্র বলছে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সিএপি হবার সাথে ৭ টি ফ্যাক্টর যথা- কম ওজনে জন্ম নেওয়া, অপুষ্টি, আবাসস্থলে দূষিত বায়ু, এইচআইভি সংক্রমণ, অপর্যাপ্ত মাতৃদুগ্ধ পান, ঘরের মধ্যে গাদাগাদি এবং অসম্পূর্ণ টিকাদান- খুবই উল্লেখযোগ্য হারে সংশ্লিষ্ট।

সিএপি এর সাথে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিগুলো নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে একটি সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন উচ্চ পর্যায়ের হাসপাতাল (টারশিয়ারী), রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুবিভাগ ও ইপিআই কেন্দ্রে ২০১৭ এর জানুয়ারী থেকে ২০১৮ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী (২-৫৯ মাস) শিশুদের মাঝে একটি কেস কন্ট্রোল গবেষণা পরিচালিত হয়। উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবেই ১২৩ জনকে কেস ও ১২৩ জনকে কন্ট্রোল নমুনা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিশু অন্তবিভাগ থেকে কেস হিসেবে সিএপিতে আক্রান্ত শিশুদের নির্বাচিত করা হয় এবং একই হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও ইপিআই কেন্দ্র থেকে বর্হিবিভাগের সিএপি নাই এমন শিশুদের কন্ট্রোল হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

এই গবেষণায় সিএপি সংক্রমণ এবং এর ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টরসমূহ বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এদের মাঝে সংশ্লিষ্টতা খুঁজে দেখার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। এই গবেষণায় আর্থসামাজিক, পারিবেশিক, পৌষ্টিক এবং অন্যান্য রোগ প্রবণতার কারণগুলো অনুসন্ধান করা হয়েছে। দরিদ্র আর্থসামাজিক অবস্থা এবং পিতার শিক্ষাগত যোগ্যতা এই রোগের সাথে উচ্চমাত্রায় সম্পর্কিত হলেও মায়েদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন ভাবে সম্পর্কিত নয়। পরিবেশগত ঝুঁকিগুলোর মধ্যে বাবা-মায়ের ধূমপানের অভ্যাস, অতিরিক্ত ঘনবসতি, ঠা-া ও আর্দ্রতায় বসবাস এবং গৃহের অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ ইত্যাদির সাথে  সিএপি সংক্রমণের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। পুষ্টির ঘাটতি এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো অপুষ্টি, রক্তস্বল্পতা, মাতৃদুগ্ধ  পানে ঘাটতি এবং অকালে জন্মগ্রহণ, বিশেষত স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ ইত্যাদি। এছাড়া ডায়রিয়ার পূর্ব ইতিহাস সিএপি সংক্রমণের সাথে সম্পৃক্ত।

সিএপি আমাদের ছোট্ট শিশুদের জন্য একটি উদ্বিগ্নতার কারণ। যেহেতু সিএপি-এর পেছনের কারণসমূহের অনেকগুলোই পরিবর্তনযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য, তাই পরিবারের সদস্য এবং প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মীবৃন্দ, স্বাস্থ্য প্রচারণা, প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এবং কার্যকরী শিশুস্বাস্থ্য কর্মসূচীর মাধ্যমে সিএপি প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এইসব ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টরগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৫ বছরের কম বয়সী সিএপি তে আক্রান্ত শিশুদের অসুস্থতা ও মৃতুহার কমাতে সাহায্য করবে এবং এর ফলশ্রুতিতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনের মান উন্নয়নে সাহায্য করবে।

পুষ্টির উন্নয়ন, যেসব শিশুদের ওজন ঘাটতি আছে বা কমে যাচ্ছে তদের চিহ্নিত করে অবস্থার উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ, শিশুদের যত্ন সম্পর্কে মায়েদের শিক্ষা ও চর্চার প্রসারের মাধ্যমে সিএপির প্রকোপ কমানো যেতে পারে। শিশুদের ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসা কমানোর জন্য আরও উন্নত ও কমদূষণকারী চুলার ব্যবহার, বাচ্চাদের ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ থেকে দূরে রাখা এবং অভিভাবকদের ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা উচিৎ।