Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

যৌথ প্রচেষ্টায় দ্রুত সার্স কোভ ২ জেনোমিক ভ্যারিয়েন্ট নির্ণয় ঃ বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও সফল পদক্ষেপ

          যৌথ প্রচেষ্টায় দ্রুত সার্স কোভ ২ জেনোমিক ভ্যারিয়েন্ট নির্ণয় ঃ বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও সফল পদক্ষেপ

ডা. মঞ্জুর হোসেন খান, আইইডিসিআর

২০১৯ এ চীনের উহান শহরের সার্স কোভ ২ এর প্রথম শনাক্তকরণের পর ২০২০ এর সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সার্স কোভ ২ এর বিভিন্ন ধরনের জেনেটিক ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে যার মধ্যে রয়েছে আলফা (বি ১.১.৭), বিটা (বি.১.৩৫১) গামা (পি.১) ডেল্টা (বি.১.৬১৭.২), ইটা (বি.১.৫২৫), জি ৪৮৪/কে (নাইজেরিয়া ভেরিয়েন্ট), ল্যম্বডা ভ্যারিয়েন্ট (সি.৩৭) ইত্যাদি। এছাড়াও উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট (ভিওসি), আগ্রহ সৃষ্টিকারী ভ্যারিয়েন্ট (বিভিওআই) ও তদন্তের অধীনে থাকা (ভিইউআই) ভ্যারিয়েন্টসহ আরো অনেক রকমের ভ্যারিয়েন্ট বা ভাইরাসের স্ট্রেইন নতুন করে পাওয়া যাচ্ছে, যা পূর্ববর্তী ধরণগুলোকে প্রতিস্থাপিত করছে। এর মধ্যে কিছু ধরণ সহজেই স্থানান্তরযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এর বেশিরভাগই পাওয়া গেছে বাংলাদেশে এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি), উন্নয়নশীল বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (আইদেশী)-এর যৌথ প্রয়াসে। প্রায় ১৩০০ নমুনা বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাতে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে ৮ই মার্চ ২০২০-এ প্রথমবার সার্স কোভ ২ এর ৩ টি নমুনা আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরীতে শনাক্ত করা হয়। ওই সময়ে আইইডিসিআরের ল্যাবরটরি ছিল দেশের একমাত্র পিসিআর পরীক্ষার ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যাব যেখানে সার্স কোভ ২-এর পরীক্ষা করা সম্ভব ছিল। অসুস্থতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশ সরকার ২০২০-এর এপ্রিলে আইইডিসিআর এর বাইরেও এসব পরীক্ষা (যেমন আরটিপিসিআর, জিন এক্সপার্ট অ্যান্টিজেন টেস্টিং ইত্যাদি) করার সক্ষমতা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে সারা দেশে ৭৫০টিরও বেশী (সরকারি ও বেসরকারি) ল্যাবরেটরি চালু রয়েছে যাদের রোজ ৫০০০০ করে এই পরীক্ষাগুলো করার সক্ষমতা রয়েছে। তবে এদেশে খুব অল্পসংখ্যক ল্যাবেরই জেনোমিক সিকোয়েন্সইং-এর ক্ষমতা রয়েছে।

আইইডিসিআর- আইসিডিডিআরবি - আইদেশি, একটি গবেষণা থেকে বলছে কোভিড-১৯ শুরুর দিকে এদেশে উহান’স স্ট্রেইনের তিনটি জাত্যাংশ ছিল। ডিজিটাল ট্রেসিং ও মোবাইল ফোনের উপাত্ত থেকে জনগণের চলাচলের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এই স্ট্রেইনটি প্রবেশের কেন্দ্র থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।

Detection of different variants

বাংলাদেশের ২০২০-এর নভেম্বর থেকে ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত নমুনার সিকোয়েন্স ২০২১-এ বিশ্লেষণ করে ডিসেম্বরে আলফা এবং ফেব্রুয়ারীতে বিটা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়। দুটি ধরণেরই ঢাকায় বিস্তারের প্রাধান্য ছিল। এর ওপরে ২০২১-এর এপ্রিলে বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের শনাক্তকরণ ও বিস্তার হ্রাসে রিয়েল টাইম জেনোমিক সিকোয়েন্সিং এর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে জনস্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণকল্পে, আইইডিসিআর আইসিডিডিআরবি এবং শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) দেশে সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং ক্ষমতা গড়ে তুলতে একটি কনসোর্টিয়াম প্রতিষ্ঠা করে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে আইইডিসিআর। এই সার্ভেইলেন্স এর উদ্দেশ্য প্রাতিষ্ঠানিক আন্তঃসহযোগিতার মাধ্যমে দেশজুড়ে জাতীয় সার্স কোভ -২ এর জেনোমিক সার্ভিলেন্স চালিয়ে জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত নেবার জন্য গণতান্ত্রিক উপায়ে তথ্য পরিবেশন করা। দেশব্যাপী ১৭টি দাতা ল্যাবরেটরি আছে যারা প্রতি চালানে অভিষ্ট সংখ্যক নমুনা প্রেরণ করে থাকে। এই প্রকল্পে কারিগরী সহায়তা দিচ্ছে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। অভীষ্ট সিকোয়েন্সিং সংখ্যা এক বছরে প্রায় ১৮০০ নিদিষ্ট করা হয়। জিনোমিক সিকোয়েন্সিং এর সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই ওয়েলকাম ট্রাস্ট থেকে আরেকটি অনুদান পাওয়া গিয়েছে।

বাংলাদেশ সার্স কোভ-২- এর জেনোমিক বিশ্লেষণ, নীতি প্রণয়নকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বাংলাদেশ সরকার সার্স কোভ -২ আলফা ভ্যারিয়েন্ট পজেটিভ হওয়া সকল রোগীকে (এদের মাঝে ভ্রমণকারী ও তাদের সংস্পর্শে আসা সবাই রয়েছেন) অতিস্বত্তর কোয়ারেন্টিনে এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ সমূহ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছিল।

বাংলাদেশে যখন বিটা ভ্যারিয়েন্টের প্রাবল্য দেখা দিয়েছিল তখন সরকার দ্রুত সংক্রমিত ব্যক্তি, তাদের সংস্পর্শে আসা মানুষদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছিল, আন্তঃজেলা চলাচল নিষিদ্ধ করে দিয়ে সফলভাবে বাংলাদেশের সংক্রমণ বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায় তখন ভারতীয় বর্ডার বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং সংক্রমণ ঠেকাতে সেখানে ছয় সপ্তাহের “লক ডাউন” ঘোষণা করা হয়।

২০২১ জুড়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্টেরগুলোর একই ধারায় উত্থান এবং ২০২০-এর প্রারম্ভিক ঢেউগুলো থেকে উপলব্ধ শিক্ষা (জনঅভিপ্রায়নের মাধ্যমে সংক্রমণ বিস্তার) বর্তমানে চলতে থাকা মহামারীর ঢেউ থামাতে প্রয়োগ করতে হবে।