ডাঃ মোঃ আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ, ডাঃ রুমানা আখতার পারভীন, ডাঃ ফারিহা মুস্ফিকা মালেক, ডাঃ আহমেদ নওশের আলম;
রোগতত্ত¦, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর);
ভূমিকা
ডেঙ্গু রোগটি ডেঙ্গু নামক ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমণ। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এই রোগ সংক্রমিত হয়। বিশ্বের ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোর জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃদু থেকে গুরুতর লক্ষণ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, প্রচন্ড মাথাব্যথা, অস্থিসন্ধি এবং পেশীতে ব্যথা, র্যাশ এবং গুরুতর ক্ষেত্রে রক্তপাতের প্রবণতা। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্বতন্ত্র সেরোটাইপ রয়েছে এবং একটি সেরোটাইপের সংক্রমণ পরবর্তীতে অন্য সেরোটাইপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষম নয়। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন সেরোটাইপ দ্বারা পরবর্তীতে সংক্রমণের ফলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) এবং ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (DSS) এর মত জীবন—হুমকি পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।
ডেঙ্গুর জন্য কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে দ্রুত সনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে এর মৃত্যুহার এক শতাংশের নিচে রাখা সম্ভব। মশা নিয়ন্ত্রণ ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার যার মধ্যে রয়েছে মশার প্রজনন স্থান কমানো এবং কীটনাশক ব্যবহার করা। অদূর ভবিষ্যতে টিকা একটি সম্ভাব্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হতে পারে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি
গত কয়েক যুগ ধরে, বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু রোগী অপ্রত্যাশিতভাবে উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০০ সালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা যেখানে ৫ লাখের কিছু বেশী ছিলো, বিস্ময়করভাবে তা ২০১৯ সালে বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ লক্ষ হয়। যেহেতু, বেশিরভাগ রোগীদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু সংক্রমণে মৃদু লক্ষণ প্রকাশ পায়, বাস্তবে খুব অল্প সংখ্যক রোগীর ব্যপারে আমরা জানতে পারি। ১৯৭০ সালের আগে, মাত্র ৯ টি দেশে মহামারী আকারে ডেঙ্গু দেখা গিয়েছিল। অথচ বর্তমানে আফ্রিকা, আমেরিকা, পূর্ব ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ—পূর্ব এশিয়া এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১০০ টিরও বেশি দেশে এই রোগটি এখন দেখা যায়। সারা বিশ্বে ১২৮ টি দেশ ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকলেও, এশিয়া মহাদেশেই এর সিংহভাগ (৭০%) সংক্রমন হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে আড়াই কোটি লোক ডেঙ্গু রোগটি স্থানীয় এমন দেশে বসবাস করে এবং ডেঙ্গু জ্বর/ ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার সংক্রমনের ঝুঁকিতে থাকে। এর মাঝে দক্ষিণ—পূর্ব এশিয়ার ১০ টি দেশে ১৩০ কোটি মানুষ বসবাস করে।
২০২৩ সালে, ৭০ টি দেশে ৩৭ লাখের বেশী ডেঙ্গু রোগী এবং ২০০০ এরও বেশি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এশিয়া মহাদেশে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন এবং সিঙ্গাপুর সহ ১৩ টি দেশ থেকে প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি
বাংলাদেশে ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয়েছিল, যা 'ঢাকা জ্বর' নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এরপর ১৯৭৭—৭৮ সালে কিছু বিচ্ছিন্ন রোগী সনাক্ত হয়। ১৯৯৬—৯৭ সালে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হয়। ২০০০ সালে ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার পুনরায় আবির্ভূত হয়। এর মাঝে সাড়ে পাঁচ হাজার জন হাসপাতালে ভর্তি রোগী নিয়ে রেকর্ডকৃত প্রথম বড় প্রাদুর্ভাব।
দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের রেকর্ডকৃত সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব ঘটে ২০১৯ সালে। সেই সময়ে ১ লক্ষ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় এবং ১৭৯ জনের মৃত্যু হয় । দেশের অন্যান্য স্থানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কম থাকলেও ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহর ছিল এর কেন্দ্রস্থল। ২০২২ সালে দেশের ৬২ টি জেলা থেকে কেস রিপোর্ট করা হয়েছিল। এছাড়াও, ডেঙ্গু কেসের ঋতুগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অক্টোবরে সর্বাধিক সংখ্যক কেস সনাক্ত করা হয়েছিল এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত সংক্রমন অব্যাহত ছিল।
২০২৩ সালের প্রাদুর্ভাব
২০২৩ সালের ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ইতিমধ্যেই আক্রান্ত এবং মৃত্যু উভয় ক্ষেত্রেই পূর্ববর্তী সমস্ত প্রাদুর্ভাবকে ছাড়িয়ে যায়। এ বছরে ৩২১,১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে যার মধ্যে ১,৭০৫ জন মারা যায়। দেশে প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীর সংখ্যা (২১১,১৭১ জন) ঢাকা মহানগর থেকে আগত (১১০,০০৮) রোগীকে ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুহার ০.৫৩, যেটা দক্ষিণ—পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এবং গত বছরের তুলনায় অনেক বেশী (চিত্র—১)।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর মৌসুম পরিবর্তন
২০২২ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালেও ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম পরিবর্তিত হয়ে জুলাই/ আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর/ অক্টোবর এ হয়েছে। এছাড়াও একটা বড় সংখ্যক রোগী নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসেও পাওয়া যায়। এর পিছনে নানাবিধ কারণ থাকতে পারে, যার মাঝে বৃষ্টির ধরণ পরিবর্তন ও অপেক্ষাকৃত উষ্ণ তাপমাত্রা অন্যতম (চিত্র—২)।
ডেঙ্গুর সেরোটাইপ:
ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪ টি সেরোটাইপ আছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপই সনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০২ সাল পর্যন্ত ডেন—৩ ছিলো প্রধান সেরোটাইপ। পরবর্তীতে ২০১৩—২০১৬ সময়কালে প্রধান সেরোটাইপ ছিল ডেন—২ এবং কিছু ডেন—১ সেরোটাইপও পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে ডেন—৩ এর পুন:আবির্ভাব ঘটে যা ২০১৯ এবং ২০২২ সালের প্রাদুর্ভাবে প্রধান সেরোটাইপ ছিল। এর পাশাপাশি ডেন—৪ এর আবার আবির্ভাব ঘটে যেটি শেষ সনাক্ত হয়েছিল ২০০২ সালে। ২০২৩ সালে ডেন—২ পুনরায় প্রধান সেরোটাইপ (৭০.২%) হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০২৩ সালের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের তীব্রতা আংশিকভাবে এই সেরোটাইপ প্রতিস্থাপন দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে কারণ এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে ভিন্ন সেরোটাইপের দ্বা্রা পুনরায় সংক্রমণ গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ব্যাবহৃত লার্ভিসাইড/এডাল্টিসাইড
লার্ভিসাইডঃ
ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ উভয় সিটি কর্পোরেশনেই— টেমেফস ৫০ইসি ব্যাবহৃত হয়
এডাল্টিসাইডঃ
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে— ম্যালাথিওন ৫% ব্যাবহৃত হয়
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে— সিটিথিওন এস ৫ আরএফইউ (ম্যালাথিওন ৫%) এবং সিটিক্লিন—আই—১.২৫ ইউএলভি (ডেল্টামেথ্রিন ১.২৫% ইউএলভি) ব্যাবহৃত হয়
ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাবস্থাপনার বিস্তারিত রয়েছে— “ন্যাশনাল গাইডলাইন ফর ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট অফ ডেঙ্গু সিনড্রম, ৪র্থ এডিশন ২০১৮ (সংশোধিত)”
একটি ছোট ভার্সনও পাওয়া যাবে— “পকেট গাইডলাইন ফর ডেঙ্গু কেস ম্যানেজমেন্ট ২০২৩”
তথাপী, সহজ রেফারেন্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে উল্লেখ করা হল:
সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গঃ
সতর্ক সংকেত
যেসব ক্ষেত্রে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং চিকিৎসার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন
১. তীব্র পেটে ব্যথা
২. ক্রমাগত বমি, দিনে ৩ বারের বেশী
৩. শরীরে পানি জমা
৪. মিউকোসাল রক্তপাত
৫. অলসতা, অস্থিরতা
৬. লিভারের ২ সে.মি. এর বেশী বৃদ্ধি
৭. প্লেটলেটের সংখ্যা দ্রুত হ্রাসের সাথে হেমাটোক্রিট বৃদ্ধি
পরীক্ষা
বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পরিচালিত ডেঙ্গু পরীক্ষা:
প্রাইমারী হেলথ কেয়ারঃ ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট IgM/ IgG এবং ডেঙ্গু NS1 অ্যান্টিজেনের জন্য র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট (RDT)।
সেকেন্ডারি হেলথ কেয়ারঃ জেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি সনাক্তকরণের জন্য ELISA এবং RDT উভয়ই করা যেতে পারে।
টারশিয়ারি হেলথ কেয়ারঃ সমস্ত ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি, যেমন— নিউক্লিক অ্যাসিড সনাক্তকরণ, সমস্ত সেরোলজিক্যাল টেস্ট এবং ঘঝ১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা ।
সাধারণ পরীক্ষা
বিশেষ পরীক্ষা
গুরুতর ডেঙ্গু সংক্রমণের নির্দেশক (প্লাজমা লিকেজ)
গুরুতর ডেঙ্গু সংক্রমণের নির্দেশক (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার)
যেসব রোগীদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা যেতে পারে তাদের ক্লিনিকাল এবং পরীক্ষাগারের মানদণ্ড
১. মুখে খাবার খেতে পারে, পর্যাপ্ত প্রস্রাব হওয়া এবং রক্তপাতের কোনো ইতিহাস নেই
২. গুরুতর চিহ্ন সমূহের অনুপস্থিতি
৩. ভর্তির জন্য অন্য কোন নির্ণায়ক নেই (যেমন— সহ—অসুস্থতা, গর্ভাবস্থা)
বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম
১. কীটতত্ত্ব (এডিস মশা) জরিপ
২. কেস এবং মৃত্যুর জন্য রিয়েল টাইম ড্যাশবোর্ডের উন্নয়ন
৩. মশার বংশবৃদ্ধির হট স্পট চিহ্নিতকরণ
৪. উচ্চ সংক্রমণ প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা
৫. ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ এবং হাসপাতালের সরবরাহ নিশ্চিত করা
৬. স্বাস্থ্য পরিচালকদের সাথে নিয়মিত বৈঠক
৭. মিডিয়া ওরিয়েন্টেশন
৮. সিটি কর্পোরেশনের সাথে সভা
৯. সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম:
ক. লার্ভিসাইড এবং অ্যাডাল্টিসাইড স্প্রে
খ. সাধারণ জনগণের সচেতনতার জন্য মাইকিং
গ. ধর্মীয় নেতা এবং স্কুল শিক্ষকদের সাথে বৈঠকের ব্যবস্থা করা
ভবিষ্যতের জন্য সুপারিশ এবং কার্যকলাপ পরিকল্পনা
১. স্বল্পমেয়াদী:
ক. আন্তঃক্ষেত্রীয় সমন্বয় জোরদার করা
খ. কমিউনিটিকে সম্পৃক্তকরণ
২. মধ্যবর্তী
ক.জাতীয় ও উপজাতীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু নজরদারির উন্নয়ন
খ.জাতীয় ও উপজাতীয় পর্যায়ে কীটতাত্ত্বিক নজরদারির উন্নয়ন
গ.পূর্ব—সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন
ঘ. সমন্বিত ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ
ঙ. টিকাদান
চ. গবেষণা
৩. দীর্ঘমেয়াদী
ডেঙ্গু ভ্যাক্সিনঃ
এখন পর্যন্ত কিউডেঙ্গা এবং ডেংভাক্সিয়া নামে ২ টি ডেঙ্গু ভ্যাক্সিন কিছু দেশে অনুমোদিত এবং প্রয়োগ করা হয়েছে। আরও একটি ভ্যাকসিন, টিভি০০৫ ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অধীনে রয়েছে এবং ইতিমধ্যে কিছু আশানুরুপ ফলাফল দেখিয়েছে।
কিউডেঙ্গা (জাপানি টাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি দ্বারা প্রস্তুত) একটি লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাকসিন। এটি প্রাপ্তবয়স্ক, কিশোর এবং ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য নির্দেশিত। ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ ০ এবং ৩ মাসে দিতে হয়। ইন্দোনেশিয়ার এফডিএ আগস্ট, ২০২২ এ ৬—৪৫ বছর বয়সী ব্যাক্তিদের কিউডেঙ্গা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এই ভ্যাকসিনটি ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ এ ইউরোপীয় ইউনিয়ন দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। ২০২৩ সালে ব্রাজিলে ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ব্রাজিল সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং ১০—১৪ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোর—কিশোরীদের জন্য মার্চ, ২০২৩ সালে কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়।
ডেংভ্যাক্সিয়া হল প্রথম ইউএস—এফডিএ অনুমোদিত (মে ১, ২০১৯ তারিখে) ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন যা সানোফি পাস্তিউর কোম্পানি দ্বারা প্রস্তুতকৃত। এই কোয়াড্রিভ্যালেন্ট ভ্যাকসিনটি ৩ টি ডোজে ০, ৬ এবং ১২ মাসে দিতে হয়। এটি একটি লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাকসিন যা বর্তমানে ৬—১৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এবং যার পূর্বে পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে তাদেরকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত। সুতরাং, এটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটি প্রয়োগের আগে বয়স নির্ধারণ এবং পূর্ববর্তী সংক্রমণের প্রয়োজনীয় প্রমান নিশ্চিত করতে হয়। ডেংভ্যাক্সিয়া ২০১৬ সাল থেকে ১১ টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়: মেক্সিকো, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, এল সালভাদর, কোস্টারিকা, প্যারাগুয়ে, গুয়েতেমালা, পেরু, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুর। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে।
টিভি০০৫ হল এনআইএআইডি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস) দ্বারা উদ্ভাবিত মনোভ্যালেন্ট ভ্যাকসিনগুলির একটি টেট্রাভ্যালেন্ট মিশ্রণ। এটি ছোট বাচ্চাদের থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলের জন্য ভালভাবে সহনীয় এবং চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধেই কার্যকর। এটি পূর্বে ডেঙ্গুর সংক্রমণ থাকা বা না থাকার উপর নির্ভরশীল নয়। এটি এখনও ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অধীনে রয়েছে।
উপসংহারঃ
ডেঙ্গু বাংলাদেশে একটি অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি সু—সমন্বিত নজরদারি ব্যবস্থা, শক্তিশালী ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল ব্যবস্থাপনা এই জনস্বাস্থ্য হুমকিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।