অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন, ডা. আহমেদ নওশের আলম, ডা. এএসএম আলমগীর, আইইডিসিআর
রোগ নির্ণয়
জ্বরের সাথে রোগের উপসর্গ (পূর্বে বর্ণিত) মিলিয়ে নেয়ার পাশাপাশি জ্বরের উপসর্গ, রোগতত্ত্বের তথ্যাদি ও ভাইরোলজিক্যাল পরীক্ষাগুলোর ফলাফল হঠাৎ দেখা দেয়া জ্বরকে অন্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য জরুরি।
অন্য রোগের সাথে পৃথকীকরণ
অনেক সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগে ডেঙ্গু এবং মারাত্মক ডেঙ্গুর উপস্থিতিকে প্রচ্ছন্ন করে ফেলতে পারে তাই স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সকলের ডেঙ্গু রোগের রোগতত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা উচিত।
রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
এ রোগ উপসর্গহীন অবস্থা থেকে সাধারণ জ্বর, ডেঙ্গু জ্বর, ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে। মশা কামড়ানোর পর ৪ থেকে ১০ দিনের জন্য ভাইরাস একটা ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা সুপ্তাবস্থায় থাকে, তারপর উপসর্গগুলো দেখা দেয় এবং ২-৭ দিন থাকে। বয়সভেদে মানুষের উপসর্গও আলাদা হতে পারে। হাড়ে মারাত্মক ব্যথার কারণেই এর আরেক নাম হাড় ভাঙ্গা জ্বর।
ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা, প্রথম উপসর্গ দেখা দেবার (সাধারণত ৪-৫ দিন, সর্বোচ্চ ১২ দিন) পর থেকে এডিস মশা দ্বারা অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে ।
‘সকলের জেনে রাখা ভালো’ অংশে বর্ণিত উপসর্গগুলো দেখা গেলে ডেঙ্গু সন্দেহ করা উচিত।
রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষাদি
ক. ক্লিনিক্যাল: টুর্নিকেট টেস্ট
খ. ল্যাবরেটরীতে
১. সাধারণ পরীক্ষাসমূহ
* জ্বরের এক সপ্তাহের মধ্যে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, হিমাটোক্রিট ও প্লেটলেট কাউন্টসহ (রক্তের সব উপাদানের আলাদা আলাদা গণনা, অনুচক্রিকাসহ) রক্ত পরীক্ষা করতে হবে
- সব জ্বরের রোগীর সংক্রমিত হবার ১ সপ্তাহের মধ্যে
- উপসর্গ আছে এমন সব রোগীর
* বায়োকেমিক্যাল টেস্ট: সেরাম এএসটি ও এএলটি (লিভারের পরীক্ষা) করাতে হবে ৩ দিনের মধ্যে
* কোয়াগুলেশন প্রোফাইল: এটি রক্তের একটি ‘জমাট বাঁধার সময়’ পরীক্ষা
২. নির্দিষ্ট পরীক্ষাসমূহ
* এনএস ১: জ্বরের প্রথম ৩ দিনের মধ্যে
* আইজিএম: জ্বরের ৫ দিন পর
* পিসি আর: জ্বরের প্রথম ৫ দিনের মধ্যে
* আইজিজি: যেকোন সময়
৩. বিশেষ পরীক্ষাসমূহ
বিশেষ ক্ষেত্রে শরীরের প্রোটিন, সোডিয়াম, এ্যালবুমিন, ক্যালসিয়াম কমে গেল কি-না, ব্লাড ইউরিয়া, নাইট্রোজেন বেড়ে গেল কি-না বা বিপাকীয় অম্লতা আছে কি-না দেখতে হবে
মূত্রের আর/এম/ই (সাধারণ) পরীক্ষা, মলের অকাল্ট ব্লাড (রক্ত যায় কি-না) পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে বা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি (বুকে বা পেটে পানি জমেছে কি-না বোঝার জন্য পরীক্ষা) করতে হবে।
চিকিৎসা
* ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয় লক্ষণ-উপসর্গ অনুযায়ী
* নিবিড় পরিচর্যাই সবচাইতে জরুরি বিষয়
* দেহে প্রাণের অস্তিত্বের অত্যাবশ্যকীয় চিহ্নসমূহের নিবিড় পর্যবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ
* ২৪-৪৮ ঘন্টার সঙ্কটপূর্ণ সময়ে, জীবন বাঁচাতে অত্যাবশ্যক অঙ্গগুলোকে সচল রাখার জন্য শরীরে জল ও ইলেক্ট্রোলাইটের সর্বোত্তম প্রতিস্থাপন এবং রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে চিকিৎসা সন্তোষজনক হবে
* প্লাজমার প্রয়োজন সচরাচর হয় না কিন্তু কোন মতেই রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে রিকম্বিনেন্ট এক্টিভেটেড ফ্যাক্টর ৭ সরবরাহের পরামর্শ দেয়া হয়
আরো বিস্তারিত জানতে এবং চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে ‘ডেঙ্গু চিকিৎসা নির্দেশিকা’ দেখুন বা আইইডিসিআর-এ যোগাযোগ করুন
ডেঙ্গু উপসর্গের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নির্দেশিকা প্রাপ্তিস্থান : আইইডিসিআর-এর ওয়েবপেজ
(https://www.iedcr.gov.bd/images/files/dengue/NationalGuidelineforDengue_2018.pdf)
অথবা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা প্রাপ্তিস্থান : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবপেজ
(http://www.wpro.who.int/mvp/documents/handbook_for_clinical_management_of_dengue.pdf)