Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৭ মার্চ ২০২৪

আন্তর্জাতিক ওয়ান হেলথ দিবস ২০২৩

মুহাম্মাদ মুশতাক হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম,  ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম;

আইইডিসিআর; বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; ইউএসএআইডি;

 

এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃ "বায়ু, ভূমি এবং পানিকে সংযুক্তকরণ"

 

ধারণাপত্র

বিশ্ব বহু মহামারী এবং বিশ্বমারীর সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ, অসংখ্য মৃত্যু, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিপর্যয় ঘটছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অন্যান্য জনগোষ্ঠীর চাইতে বেশী বৈষম্যের শিকার হয়েছে, যারা এমনিতেই আগে থেকে তীব্র বৈষম্যের শিকার ছিল। মানুষের রোগসমূহের মধ্যে ৭০% এরও বেশি সংক্রমণ আসে গৃহপালিত বা বন্যপ্রাণী থেকে। মানব জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট চাহিদার জন্য বিশ্বকে আরও বেশি খাদ্য উৎপাদন এবং অন্যান্য প্রয়োজন যেমন আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুবিধা ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। আমাদের শিল্পায়ন, ভ্রমণ এবং পরিবহন, খনিজ সম্পদের জন্য খনন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার তথা ক্রমবর্ধমান ভোগের অন্তহীন চাহিদা মেটাতে প্রকৃতি থেকে নিংড়ে নেয়ার প্রবণতার ফলে আমাদের বসবাস যোগ্য পৃথিবী ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে এবং আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের মূল্য দিয়ে এর দায় পরিশোধ করছি। প্রাণী, প্রকৃতি এবং মানব সমাজ আজ আরও বেশী পরস্পর নির্ভরশীল এবং আন্তঃসংযুক্ত হয়ে উঠেছে, যে কারণে এই সমস্যাটি জ্ঞানের যে কোনও একটি শাখা বা কোনও একটি সেক্টরের নিজস্ব পদ্ধতির দ্বারা সমাধান করা খুব জটিল।  

 

পরস্পর বিচ্ছিন্ন পেশা ও সেক্টরের নিজ নিজ পৃথক কর্মকান্ডের অকার্যকরতাকে প্রত্যক্ষ করে একদল দূরদর্শী বিজ্ঞানী এবং পেশাজীবীবর্গ ২০০৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ”ওয়ান হেলথ” ধারণাটি প্রস্তাব করেছিলেন যা এখন ব্যাপকভাবে ’ম্যানহাটন প্রিন্সিপল’ নামে পরিচিত। এটি মানুষের জন্য তথা একটি নিরাপদ গ্রহের জন্য মানব, গৃহপালিত প্রাণী, বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশের অপরিহার্য যোগসূত্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় আন্তর্জাতিক মন্ত্রী পর্যায়ের এভিয়ান অ্যান্ড প্যানডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা (আইএমসিএপিআই) সম্মেলনে ওয়ান হেলথকে বৈশ্বিক চিন্তাধারার মূলধারায় আনা হয়, যেটি পরবর্তি দিন ও বছরগুলিতেও চলমান রাখার অঙ্গিকার করা হয়। কালক্রমে এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবং বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থা একটি ওয়ান হেল্থ যৌথ কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ করেছে যাতে সামষ্টিকভাবে স্বাস্থ্যের হুমকি প্রতিরোধ, পূর্বাভাস, সনাক্তকরণ এবং সাড়াদান কৌশলের একক পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব করা হয়।

 

বাংলাদেশ এই বৈশ্বিক আহ্বান বাস্তবায়নের জন্য খুব বেশি সময় নেয় নি। পেশাজীবীদের একটি দল ২০০৮ সালে “ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ” নামে একটি সংগঠন স্থাপন করে। পেশাগত বিভিন্ন শাখা এবং বিভিন্ন সেক্টরের প্রায় ১৫০০ সদস্য নিয়ে এখন এটি একটি  প্রাণবন্ত নাগরিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সংগঠনটি বাংলাদেশে ওয়ান হেলথ বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। ২০১২ সালে, বাংলাদেশ একটি জাতীয় ওয়ান হেল্থ কর্মকৌশল এবং কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দ্বারা যথাযথভাবে অনুমোদিত। কর্মকৌশল অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার “ওয়ান হেল্থ টেকনিক্যাল এডভাইজরি গ্রুপ” এবং “ওয়ান হেল্থ আন্তঃমন্ত্রণালয় স্টিয়ারিং কমিটি” গঠন করে। ২০১৭ সালে আর একটি সভায়, সরকারের মধ্যে ওয়ান হেল্থকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য একটি “ওয়ান হেলথ সেক্রেটারিয়েট” গঠন করে। এটি “ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ” এর সাথে একযোগে কাজ করছে। ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ এবং ওয়ান হেলথ সেক্রেটারিয়েট যৌথভাবে দুই বছর পর পর “ওয়ান হেলথ কনফারেন্স” এর আয়োজন করে। সর্বশেষ ওয়ান হেলথ কনফারেন্সটি ২০২৩ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে দেশ—বিদেশের প্রায় এক হাজার বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেছিলেন।

 

কোভিড-১৯ বিশ্বমারী দেখিয়েছে যে বিশ্বব্যাপী সমন্বিত এবং যৌথ সাড়াদানের জন্য ওয়ান হেলথ আন্দোলনের সতর্কবার্তা সত্য ছিল। প্রকৃতপক্ষে সেই সতর্কবার্তার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যর্থতার জন্য যে মূল্য দিতে হয়েছে তা বহন করা সহজ নয়। এখন ওয়ান হেলথ বিশ্বব্যাপী এবং জাতীয় পর্যায়ে অনেক বেশি স্বীকৃত যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবং  বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বয়ে ওয়ান হেলথ কোয়াড্রিপার্টাইট গঠনের মাধ্যমে আবির্ভুত হয়েছে। ওয়ান হেল্থ প্যানডেমিক ফান্ডের মূল নীতি হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং জি২০—এর মতো প্রভাবশালী রাজনৈতিক ফোরাম ওয়ান হেলথ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কোয়াড্রিপার্টাইট “ওয়ান হেলথ” কে  নতুন ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে যা হলো—

 

“ওয়ান হেলথ হল একটি সমন্বিত, ঐক্যবদ্ধ পদ্ধতি যার লক্ষ্য মানুষের, প্রাণীর এবং বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের টেকসই ভারসাম্য এবং এদের সর্বোত্তম ব্যবহারকে গুরুত্ব দেয়। এটি স্বীকৃতি দিয়েছে যে, মানুষের স্বাস্থ্য, গৃহপালিত এবং বন্য প্রাণী, গাছপালা, এবং বিস্তৃত পরিবেশ (বাস্তুতন্ত্র সহ) ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত এবং আন্তঃনির্ভরশীল। এই পদ্ধতি সমাজের বিভিন্ন স্তরের একাধিক সেক্টর, পেশাজীবী শাখা এবং সম্প্রদায়কে একত্রিত করে চালিত হয়ে সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে স্বাস্থ্য ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি মোকাবেলা করতে উদ্বুদ্ধ করে। এর পাশাপাশি একইসাথে বিশুদ্ধ পানি, শক্তি  এবং বায়ু, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করে এবং টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখাও এই পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত।  

 

২০২২ সালে ওয়ান হেল্থ সম্পর্কিত ৪র্থ আন্তঃমন্ত্রণালয় স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে ওয়ান হেলথ কৌশল হালনাগাদ করার জন্য এবং মাঠ পর্যায়ে ওয়ান হেল্থ প্ল্যাটফর্ম প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

বিশ্ব সমাজে ওয়ান হেলথকে এগিয়ে নেয়ার জন্য, ২০১৬ সাল থেকে ৩রা নভেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে ওয়ান হেল্থ দিবস উদযাপন করছে। এর সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশেও প্রতি বছর ওয়ান হেল্থ দিবস পালন করা হচ্ছে।

 

এবছর ৫ নভেম্বর ওয়ান হেলথ বাংলাদেশ এবং ওয়ান হেলথ সেক্রেটারিয়েট যৌথভাবে বাংলাদেশে “ওয়ান হেল্থ দিবস” পালন করেছে। এখানে পেশাদার, একাডেমিয়া (যারা গবেষনা, শিক্ষা এবং স্কলারশিপ নিয়ে কাজ করে), সরকার এবং সরকারের উন্নয়ন সহযোগী অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বছরের বিষয়/ স্লোগান হল —

 

"বায়ু, ভূমি এবং পানিকে সংযুক্তকরণ", সাথে স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত জটিল চ্যালেঞ্জগুলি সমাধান করতে ওয়ান হেলথ এর সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে।