Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নবজাতকের জীবন বাঁচাইঃ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাগালে পৌঁছাতে নবজাতকের মানসম্পন্ন জরুরি পরিচর্যা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ

ড. কাজী আহমেদ জাকি, আইইডিসিআর; ড. জাহিদ হায়দার, ডিজিএইচএস; ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, আইইডিসিআর;

 

 

মূল বার্তা

  • প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মাঝে ২০ জনের মৃত্যুর কারণে নবজাতকের মৃত্যুহারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম

  • সকল নবজাতকের মৃত্যুর মাঝে ৬৬ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য শ্বাসকষ্ট ও রক্তের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে

  • সকল প্রসবের মাঝে ৩৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক আর ৫৫.৪৬ শতাংশ উপজেলা সমূহের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য “চাহিদা সম্পন্ন জনগণের জন্য আর্থিক সহায়তা (ডিএসএফ)” ভাউচারের অনুকূলে ব্যবহৃত হয়

  • ডিএসএফ এর আওতাধীন এলাকাগুলোতে প্রশিক্ষিত কর্মী সংখ্যা বাড়ানো গেলে নবজাতকের পরিচর্যা (ইওসি) ২৪/৭ নিশ্চিত করা সম্ভব

  • বাড়তি কর্মীসহ ডিএসএফ সেবার সংখ্যা বাড়ালে ইওসি এলাকাগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের মাধ্যমে নবজাতকের মৃত্যুহার কমানো সম্ভব

সমস্যার বিবরণ

শুধুমাত্র ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে ২৫লক্ষ নবজাতক জন্মের প্রথম মাসেই মারা গিয়েছিল। এদের বেশিরভাগই মারা গিয়েছিল জন্মের প্রথম সপ্তাহেই আর ১০লক্ষ প্রথম দিনেই এবং প্রায় সমান সংখ্যক পরবর্তী ছয় দিনের মধ্যে। ২০১৮ তে নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজারে (জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর মাঝে) ২০ জন ও বছরে ৫৬,৩৪১ মারা যাওয়ার উপাত্ত নিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে অষ্টম স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল। যদিও নবজাতকের মৃত্যুহার ১৯৮৯ - ২০১৭ পর্যন্ত ধারাবাহিক স্থিতাবস্থায় ৫২/১০০০ থেকে ২০/২০০০ এ নেমে এসেছে। তবুও এটি এখনও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১২/১০০০তে পৌঁছতে পারেনি।

বাংলাদেশে প্রায় সকল (৯১ শতাংশ) নবজাতকের মৃত্যু ঘটে থাকে প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য প্রসব জটিলতার কারণে যার মধ্যে ৬৬ শতাংশ প্রসবের সময় শ্বাস বন্ধ ও পুরো রক্তে সংক্রমণের কারণে। সম্পূর্ণ কর্মীদল, উচ্চমানসম্পন্ন ইওসি - ডিএসএফ সেবাকেন্দ্রগুলো এরকম নবজাতকের পরিচর্যা করতে পারে কিন্তু বাড়িতে প্রসবের উচ্চহার (৬৩ শতাংশ) এই ব্যবস্থা ব্যবহারকে ব্যর্থ করে দেয়। বাংলাদেশের ২০১৮তে ডিএসএফের অন্তর্ভুক্ত মায়েদের মাঝে মাত্র ৫৫.৫ শতাংশ সেবা কেন্দ্রে গিয়ে প্রসব করান।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব কম হবার প্রধান কারণগুলো হলো, চাহিদা অনুযায়ী সেবা না পাওয়া, নিম্ন মানের সেবা এবং সেবার খরচ। সেবাগুলোকে কয়েকভাগে ভাগ করে নেয়া যেতে পারে, যেমন; যারা মূল (বেসিক) ইওসি সেবা প্রদান করে, যারা সমন্বিত (কম্প্রিহেনসিভ) সেবা প্রদান করে এবং যারা সমন্বিত ইওসি-ডিএসএফ সেবা প্রদান করে, যেখানে দরিদ্র জনগণকে সেবা নিতে আগ্রহী করে তুলতে সেবাগ্রহীতা ও প্রদানকারী উভয় পক্ষকে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়।

বর্তমানে ৪৩৩ টি উপজেলা হাসপাতালে মাত্র ৫৫টি (১২.৬ শতাংশ) হাসপাতাল সমন্বিত ইওসি সেবা দিতে পারে এবং নবজাতকের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা বা রক্ত ছড়িয়ে পড়া সংক্রমনের চিকিৎসা দিতে পারে, পাশাপাশি আশেপাশের (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ৩৫শতাংশকে সরাসরি আর্থিক সাহায্য দিতে পারে। অধিকন্তু ১৩২টি (৩০.৩ শতাংশ) হাসপাতাল সমন্বিত ইওসি সেবা দিলেও আর্থিক সহায়তা দেয় না আর বাকি হাসপাতালগুলো কেবলমাত্র মূল ইওসি সেবা দিয়ে থাকে। এর বাইরে যা বলার হলো তা হচ্ছে, নবজাতকের পরিচর্যা বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মীর অপ্রতুলতা। মাত্র ৩৪ শতাংশের ২৪/৭ বা সার্বক্ষণিক সেবা দেবার জন্য পূর্ণমাত্রায় কর্মী রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের জন্য সেবাগ্রহীতাদের ব্যক্তিগত মোট খরচ পড়ে পাঁচ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো যেখানে বাড়িতে প্রসবের খরচ প্রায় ২ হাজার টাকা।

বর্তমানে স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাতের কার্যক্রম পরিকল্পনায় ইতোমধ্যেই ''২০২১ সালের মধ্যে ১০টি উপজেলায় ডিএসএফ সম্প্রসারণ'' নীতি গৃহীত হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার উদ্দিষ্ট উপজেলাসমূহে ইওসি সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ৪৮০জন করে চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

পলিসি অপশনস

বাংলাদেশের প্রসবজনিত জটিলতা শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা রক্তের ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণ হতে নবজাতকের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে নিম্নোক্ত নীতিসমূহ সুপারিশ করা হলো

১। বিদ্যমান ডিএসএফ এলাকায় ২৪/৭ সেবা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষিত কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি

কিঃ বিদ্যমান ৪৫টি ডিএসএফ কেন্দ্রে ২৪/৭ সমন্বিত ইওসি সেবা নিশ্চিত করতে ইওসি প্রশিক্ষিত কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি।

কেনঃ চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে বিদ্যমান ডিএসএফ সাইটগুলোর ধারণক্ষমতা বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। ডিএসএফ সাইটের কেন্দ্রগুলো শল্য চিকিৎসকদের ১১০০/- টাকা, অবেদন চিকিৎসকদের ৬০০ টাকা এবং সিজারিয়ান সেকশনে সাহায্যকারীদের ৫০০/- টাকা করে বাড়তি প্রণোদনা দিয়ে থাকে। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য সেবা প্রদানকারীদের প্রণোদনা ৬০/- থেকে ৭৫/- টাকা। ইওসি সেবায় বাড়তি আর্থিক সুবিধা অবশ্যই কর্মীদের উন্নয়ন ও সেবাকেন্দ্রে তাদের আরো বেশি সময় দেয়া নিশ্চিত করবে।

সম্ভাব্যতাঃ বেশী। এই পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সেবা দেয়ার আচরণের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কাজের জন্য বাড়তি প্রণোদনা, সেবাদানকারীদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অবস্থান করতে উৎসাহিত করবে ফলে গ্রামবাংলার মায়েদের জন্য ২৪/৭ সেবাগ্রহণের দ্বার উন্মুক্ত হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে, ডিএসএফ কেন্দ্রগুলোতে দক্ষ সেবাপ্রদানকারী ও সেবাগ্রহণকারীদের কাছে সময়মত টাকা ছাড় করা।

২। সমতাভিত্তিক অগ্রাধিকারে বিদ্যমান ৫৫ (১২.৭ শতাংশ) থেকে ১৮৭টি (৪৭ শতাংশ) উপজেলা হাসপাতালকে বিস্তৃত ও শক্তিশালীকরণ

কিঃ প্রয়োজনীয় সকল কর্মক্ষম যন্ত্রে সুসজ্জিত এবং ডিএসএফ কার্যক্রম সম্বলিত ইওসি সাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যাতে সমন্বিত সেবার পরিধি বৃদ্ধি পায়।

কেনঃ ইওসি ডিএসএফ সেবাসুবিধা বৃদ্ধি করলে, উপজেলাগুলোতে দরিদ্র মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের আচরণে পরিবর্তন আসবে। ডিএসএফ কার্যক্রমের ফলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে খরচ কমলে, ডিএসএফ -ইওসি সমন্বিত সেবা কার্যক্রম গ্রহণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব উভয়ই বাড়বে, ফলশ্রুতিতে প্রসবজনিত জটিলতা থেকে নবজাতকের মৃত্যুহার কমবে।

সম্ভাব্যতাঃ বেশী। গ্রামবাংলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের আচরণ এবং ইওসি সেবার ব্যবহার বৃদ্ধির উপর এই পরিকল্পনার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর জন্য প্রয়োজন, প্রস্তাবিত সম্প্রসারণের উদ্যোগটিতে সকল সমন্বিত ও সুবিধাসম্পন্ন সেবাকেন্দ্রে ডিএসএফ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্তি।

অর্থনৈতিক ও জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

সার্বক্ষণিক ২৪/৭ সেবা বিস্তারের উদ্দেশ্যে যদি কর্মীসংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে ৭৪ শতাংশ প্রসব, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে হবে বলে ধারণা করা যায়। এর অর্থ বিদ্যমান ডিএসএফ সাইটে আরো ১১৮৩২০টি বেশি প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হবে।

বিদ্যমান ৫৫টি ডিএসএফ থেকে ১৪৭টি তে উন্নীত করার প্রস্তাব, বর্তমানে ৩৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হারকে ৬৭ শতাংশে -এ বৃদ্ধি করবে। এর অর্থ বাড়তি ৫,৯৪,৬৯৯টি প্রসব ডিএসএফের বর্ধিত সুবিধাভুক্ত কেন্দ্রগুলিতে হবে। বিদ্যমান ৫৫টি সাইটে প্রশিক্ষিত কর্মী সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হলে মোট ১.৩৭৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, প্রতিটি ডিএসএফ সাইটে বাৎসরিক ২.৫ কোটি টাকা হিসেবে মোট ৩৩.৬ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, সুবিধাসমূহ বর্ধিত করতে।

ডিএসফ সাইটের ৩০ শতাংশ সম্প্রসারণের জন্য ২,০২,২৯১টি এবং প্রশিক্ষিত কর্মী বৃদ্ধির জন্য আরো ৭৭,৫৭৮টি নবজাতকের জীবন বাঁচবে বলে আশা করা যায়।

সুপারিশ সমূহ ও পরবর্তী করণীয়

  • প্রশিক্ষিত কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি ও ডিএসএফের সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে ২৪/৭ নিরাপদ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সুবিধার যথাযথ ব্যবহার বৃদ্ধি করে ইওসি সেবা প্রদান নিশ্চিত করা যাবে

  • ডিএসএফ সুবিধা বৃদ্ধির সাথে সমান অগ্রাধিকার দিয়ে সেবার মান উন্নয়ন করা গেলে শিশুমৃত্যুরোধে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বৃদ্ধির সুবিধার যথাযথ ব্যবহার ও অভিগমনও বাড়বে।