মোঃ শামসুল আরেফিন, এমআইএস, শাহ আলী আকবর আশরাফী, এমআইএস, তাহমিনা শিরিন, আইইডিসিআর, কাজী আহমেদ জাকি, আইইডিসিআর
পটভূমি:
৮ই মার্চ ২০২০-এ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ কেস শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার একটি সক্রিয় জাতীয় নজরদারি কার্যক্রম শুরু করে। সরকার ২৬শে মার্চ ২০২০-এ লকডাউন জারি করে এবং কোভিড-এর সংক্রমণ কমাতে ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে দেশব্যাপী টিকা দেওয়া শুরু করে। এর ফলে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা কমেছিল কিনা তা মূল্যায়ন করতে আমরা জাতীয় কোভিড-১৯ নজরদারি তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছি।
পদ্ধতি:
ক্লিনিকাল লক্ষণ এবং উপসর্গ নির্বিশেষে সার্স কোভ ২-এর জন্য আর টি পি সি আর পরীক্ষা পজিটিভ এসেছে এমন সকল ব্যক্তিকে নিশ্চিত কোভিড রোগী হিসেবে ধরা হয়েছে। আমরা জাতীয় কোভিড-১৯ নজরদারি সিস্টেম থেকে মার্চ ২০২০ থেকে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত সাপ্তাহিক মোট নিশ্চিত হওয়া কেসের বা রোগীর ডেটা বা তথ্য উপাত্ত, ডাউনলোড বা সংগ্রহ করেছি। সিস্টেমটি আর টি পি সি আর পরীক্ষার পজিটিভ রিপোর্ট সরবরাহ করে এমন ১৩১টি সেন্টিনেল ক্লিনিকাল ল্যাবরেটরী থেকে নমুনা কেস সংগ্রহ করে থাকে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) এর প্রেস রিলিজ থেকে আমরা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজের মোট ভ্যাকসিনের ডেটা পেয়েছি। উপাত্ত বিশ্লেষনের রিগ্রেশন এনালাইসিসের জন্য ডিপেন্ডেন্ট বা নির্ভরশীল ভ্যারিয়েবল হিসেবে মোট নিশ্চিত হওয়া সাপ্তাহিক কেসগুলিকে এবং স্বনির্ভর বা ইন্ডিপ্যান্ড্যান্ট ভ্যারিয়েবল হিসেবে মোট জনসংখ্যার বিপরীতে প্রতি সপ্তাহে ক্রমবর্ধমান টিকাদানের আওতায় সামগ্রিক ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ এবং লকডাউনের অনুপস্থিতি বা উপস্থিতিকে ডিপেনডেন্ট ভ্যারিয়েবল ধরা হয়েছিল।
ফলাফল:
গবেষণা চলাকালীন সময়ে ১,৯৬০,৩২৪টি নিশ্চিত কেস পাওয়া যায়। মিডিয়ান সাপ্তাহিক কেস সংখ্যা ছিল ১১,১৫৬ (সীমা: ২৫০-৯৮,১৫৫)। মোট জনসংখ্যার বিপরীতে ক্রমবর্ধমান একক ডোজ টিকা কভারেজ ছিল ৭৫.৪% এবং দুই ডোজ টিকা দেওয়ার কভারেজ ছিল ৬৮%। নিশ্চিত কেসগুলোর ক্ষেত্রে যারা প্রথম ডোজ সম্পূর্ণ করেছিলেন তাদের সাপ্তাহিক রিগ্রেশন কোএফিশিয়েন্ট ছিল ১৪২৫.৩ (সি আই ৪৮৮.৯-২৩৬১.৮)। অন্যদিকে দুটি ডোজ কভারেজের ক্ষেত্রে এই মান ছিল-১৭৮২.৮ ( পি= ০.০০৪, ৯৫% সি আই ঃ ২৯৬৬.৪ থেকে ৫৯৯.৩)। প্রতি শতাংশ সামগ্রিক ২য় ডোজ কভারেজের বৃদ্ধির সাথে ১৭৮৩জন করে কেস সংখ্যা কমেছিল।
যদিও এই হিসেবটা লিনিয়ার ভাবে প্রতিয়মান হয়নি। আমরা পজিটিভ কেসের ২য় সর্বোচ্চতা দেখতে পাই যখন ২য় ডোজের কভারেজ প্রায় ৪০% এ পৌঁছেছিল। লকডাউনের রিগ্রেশন কোএফিশিয়েন্ট ছিল ৯১৮৬.১ (সি আই ঃ ২১২৪৯.৩৭- ২৮৭৭.১২)। কেস সংখ্যা হ্রাসের ক্ষেত্রে লকডাউনের প্রভাব ছিল নেতিবাচক, যদিও এর প্রভাবটা পরিসংখ্যান তত্ত¡ানুযায়ী উল্লেখযোগ্য নয়।
উপসংহার:
যেকোনো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সম্পূর্ণ করা সাপ্তাহিক মোট পরীক্ষাগার নিশ্চিত হওয়া কেস উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে যদিও সম্পর্কটি রৈখিক ছিল না। উচ্চতর টিকা কভারেজের সাথে নিশ্চিত কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্টের বা রূপের সংক্রমণের কারণেও হতে পারে। কোভিড-১৯ বিস্তার কমাতে বিরতিহীন লকডাউনের প্রভাব আরও ভালভাবে মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে।
সরকার/নীতিনির্ধারকদের জন্য সুপারিশমালা:
টিকা দেওয়ার পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাগুলো গুরুত্বের সাথে প্রয়োগ করা উচিত কারণ আমরা উচ্চতর টিকা কভারেজের মধ্যেও দ্বিতীয় পজিটিভ কেসের সর্বোচ্চাবস্থা দেখেছি।
Receiving the 1st dose of COVID-19 vaccine at BSMMU.
Image source:WHO Bangladesh