Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশে হেপাটাইটিস-ই: একটি মহামারীর বৃত্তান্ত

ডা. মঞ্জুর হোসেন খান জনি, ভাইরোলজি বিভাগ আইইডিসিআর

 

 

ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চল অর্থাৎ গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকাগুলোতে ভাইরাসজনিত লিভার বা যকৃত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার অন্যতম কারণ হেপাটাইটিস-ই (এইচিইভি)। সাধারণত প্রচুর বৃষ্টিপাত বা মৌসুমী বৃষ্টির পরপর হেপাটাইটিস-ই এর প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। এই উপমহাদেশীয় অঞ্চলে ব্যাপক আকারে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিলো ভারতের নয়াদিল্লীতে (১৯৫৫-৫৬ সালে, ৩০,০০০ রোগী), বার্মায় (১৯৭৬-৭৭ সালে, ২,০০০ রোগী), ভারতের কাশ্মীরে (১৯৭৮সালে, ৫২,০০০ রোগী) ও কানপুরে (১৯৯১ সালে, ৭৯,০০০ রোগী) এবং চীনে (১৯৮৬-৮৮ সালে, ১০০,০০০ রোগী)।

বাংলাদেশে প্রথম এইচিইভি-এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ২০০৮ সালে যখন পূর্ব আরিচপুরে (সাভার, ঢাকা) ৪ জন গর্ভবতী আকস্মিক জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এর কারণ উদ্ঘাটনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআরবি-এর সদস্যদের নিয়ে একটি বিশেষ দল (ওআই দল) গঠন করা হয়। ওআই দলটি মোট ৪৭৫১ জন সন্দেহভাজন হেপাটাইটিস-ই রোগীর সন্ধান পায় যাদের মাঝে ১৭ জন মৃত রোগীও ছিল। এদের ৭৩ জনের রক্তপরীক্ষা করে ৫৬ জন (৭৭%)-এর রক্তে এন্টি এইচইভি-আইজিএম (হেপাটাইটিস শনাক্ত করার বিশেষ উপাদান) পাওয়া যায়। নারী এবং বিশেষ করে যারা প্যারাসিটামল (এসিটামিনোফেন) জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করেছিল, তাদের মাঝে মৃত্যুহার বেশি ছিল।

আরেকটা বিষয় উল্লেখ্য যে, গর্ভবতীদের মাঝে জন্ডিসের সাথে গর্ভপাত বা নবজাতকের মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরপর থেকেই ওআই-দলটি নিয়মিতভাবে রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণ উদঘাটন, বিস্তৃতি শনাক্তকরণের পাশাপাশি আক্রান্ত লোকালয়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে ‘এই রোগের কারণ, ঝুঁকিপূর্ণ দিক এবং তা থেকে মৃত্যু সম্পর্কিত ধারণা’ নিরূপণ এবং প্রয়োজনে মৌখিক ময়না তদন্তের বিষয়টি নিয়েও কাজ করতে শুরু করে। ২০১৩ সালে নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, সেখানে ক্রমবর্ধমান জন্ডিসের বিষয়ে আইইডিসিআরকে অবগত করে। ওআই-দলটি সেখানে প্রাদুর্ভাব নিয়ে তদন্ত করে ১১২ জন সন্দেহভাজন হেপাটাইটিস-ই এর রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে দেখে ৮৬ জন (৭৬%) এইচইভি-তে আক্রান্ত। ওই এলাকার পানীয় জলের প্রধান উৎস, মলবাহিত জীবানু দ্বারা দূষিত ছিল বলেও প্রমাণ মেলে। তবে পানির নমুনায় এইচইভি-এর উপস্থিতি, কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে নিরীক্ষণ করা যায়নি।


 

২০১৭ সালের জুনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন থেকেও একই রকমের প্রাদুর্ভাবের তথ্য আসে। তখন তদন্তকারী দলটি এইচইভি-এর ২ জন এবং হেপাটাইটিস-এ এর ২৪ জন রোগী শনাক্ত করে। পানির নমুনা পরীক্ষা করেও মলবাহিত জীবানু ‘কোলিফর্ম’-এর দ্বারা দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়।

সম্প্রতি (মে-জুলাই ২০১৮) চট্টগ্রামে প্রায় ২৮০০ ব্যক্তি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তদন্তকারী দলটি দুই পর্যায়ে এই মহামারীর অনুসন্ধান চালায়। প্রথম পর্যায়ে ১২৮ জন রোগী চিহ্নিত করে। এদের মধ্যে সন্দেহভাব্জন ২৮ জনের রক্ত পরীক্ষা করে সকলের রক্তে এন্টি-এইচইভি-আইজিএম এর উপস্থিত শনাক্ত করে। ওআই-দল দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ জন মৃত রোগীর মৃত্যুর মৌখিক ময়না তদন্ত করে।

প্রতিটি প্রাদুর্ভাবেই, সংক্রমণের সাথে দূষিত খাবার পানি এবং ভালভাবে হাত না ধোয়ার সংশ্লিষ্টতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রমাণিত হয়। ফোটানো বা বিশুদ্ধকৃত পানি পান, ভালভাবে রান্না করা খাবার খাওয়া, রাস্তার খাবার পরিহার করা এবং নিয়মিত সাবান ও পানির ধারায় হাত ধোয়ার মাধ্যমে এইচইভি-সহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।


 

টারশিয়ারি (বিশেষায়িত) পর্যায়ের হাসপাতালে এইচইভি-এর জরিপ পরিচালনা

বাংলাদেশে, আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে ৬টি উচ্চপর্যায়ের হাসপাতালে, এইচইভি-এর ওপর একটি তিন বছর মেয়াদি (জানুয়ারি ২০১৫ - ডিসেম্বর ২০১৭) জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এই জরিপে হাসপাতালের আওতায় থাকা জনগোষ্ঠীর মৃত্যুহারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এইচইভি-এর সাথে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যুহারের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ক এটিই বাংলাদেশের প্রথম জনগোষ্ঠীভিত্তিক হিসেব বা জরিপ ।

অর্জন

আইসিডিডিআরবি-এর বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নরওয়েভিত্তিক গ্লোবভাক থেকে, চীনের জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনোভ্যাক্স বায়োটেক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত হেপাটাইটিস-ই ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা, এইচইভি-২৩৯ (হেকোলিন) নিয়ে গবেষণা পরিচালনার জন্য গ্লোবাল হেলথ ও ভ্যাক্সিনেশন-এর একটি পুরষ্কার অর্জন করেছে।