Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আমার সন্তানরা থাকুক পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব থেকে মুক্ত: স্বেচ্ছায় ধূমপানমুক্ত বাসগৃহের জন্য প্রচারণা

ড. সামসাদ রাব্বানী খান, আইইডিসিআর; ড. মোহাম্মদ সোহেল সামাদ, আইইডিসিআর; ড. অনুপম সরকার, আইইডিসিআর

 

 

মূল বার্তা

  • বাংলাদেশের পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব বিশেষ করে শিশুদের ওপর অস্বীকৃত ও অলক্ষিত রয়ে গেছে

  • একটি পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের শিশুদের এ্যাজমার ২৩ শতাংশ, শ্বাসকষ্টের নিচের অংশের সংক্রমণের ৩৫ শতাংশ আর কানের সংক্রমণের ৩৯ শতাংশ দেখা দেয় পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে

  • বাংলাদেশের ৪০ শতাংশেরও বেশি শিশু বাড়িতেই নিয়মিত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়

  • পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অজ্ঞতাই বাড়িতে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখোমুখি হবার জন্য দায়ী

  • “স্বেচ্ছায় ধূমপানমুক্ত বাড়ি”র প্রচারণা, বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের মুখোমুখি হওয়ার মাত্রা কমাতে সহায়ক হতে পারে

সমস্যার বিবরণ

প্রত্যক্ষভাবে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিস্তর আলোচনার মাঝে প্রায়শঃই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হবার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার “বিশ্বজুড়ে তামাক মহামারী ২০০৯” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “ধূমপানজনিত কারণে প্রতি ১০টি মৃত্যুর একটি ঘটে পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাবে”। যারা ধূমপান করেন তারা শুধু নিজেদের নয় তাদের আশেপাশে যারা থাকে বিশেষতঃ শিশুদের ক্ষতি করে থাকেন, কারণ শিশুরা বড়দের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

শিশুদের ওপর পরোক্ষ ধূমপানের প্রধান ক্ষতিকর দিকগুলো হলো, কানের সংক্রমণ, অতি ঘন ঘন ও তীব্র এ্যাজমা অ্যাটাক এবং শ্বাসতন্ত্রের নিচের অংশে সংক্রমণ। এর বাইরেও যেসব শিশু পরোক্ষ ধূমপানের মুখোমুখি হয়, তারা পরবর্তীতে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, বিপাক প্রক্রিয়ার রোগ, বন্ধ্যাত্ব সহ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে নিয়মিত ধূমপায়ী হবার ঝুঁকিতে থাকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সমীক্ষা বলছে অসুস্থতার সাথে মানিয়ে নিয়ে যাপিত জীবনের জন্য যে আয়ুক্ষয় হয় তার ৬০ শতাংশ এর কারণ শিশুদের পরোক্ষভাবে ধূমপানের মুখোমুখি হওয়া। প্রতিবছর পরোক্ষ ধূমপানের মুখোমুখি হবার কারণে যে ৬ লক্ষ মৃত্যু ঘটে তার বেশিরভাগই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আর এদের মধ্যে ২৮ শতাংশই শিশু। ইউনিয়ন এর মতে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সেই বাংলাদেশি শিশুদের ৪২ শতাংশ বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। তুলনামূলকভাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই হার ২৭ শতাংশ।

সম্প্রতি বিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি গবেষণায় দেখা যায় ঢাকার পঞ্চম শ্রেণির ৪৩শতাংশ শিক্ষার্থীদের বাড়িতে অন্তত পক্ষে একজন ধূমপায়ী আছে। এদের মুখের লালায় কোটিনিনের (রক্তের একটি সূচক) মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৯৫ শতাংশ (মোট শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ) শিক্ষার্থীই পরোক্ষ ধূমপানের মুখোমুখি হবার ইঙ্গিত বহন করছে। বাবা-মা ও অভিভাবকের অজ্ঞতাই শিশুদের অতিমাত্রায় পরোক্ষ ধূমপানের সংস্পর্শে আসার কারণ। প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশী নাগরিকদের ওপর করা সমীক্ষায় দেখা যায় পরোক্ষ ধূমপানের মাধ্যমে বাড়ির অন্যান্যদের ক্ষতি হবার বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে তাদের জ্ঞানের অপ্রতুলতাই মূলত দায়ী।

বাংলাদেশীদের মাঝে তামাক ব্যবহারের সামগ্রিক অবনমন ঘটলেও ধূমপান এখন খুব বেশি সচরাচরদৃষ্ট। পুরুষদের মধ্যে (৩৭ শতাংশ) এর কারণ কতকটা সিগারেটের দাম কম বলে। পৃথিবীতে সর্বনিম্ন দামের সিগারেট লভ্যতার দেশগুলোর মাঝে বাংলাদেশ অন্যতম, যেখানে প্রায় প্রত্যেকেই সিগারেট এবং স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত ফিল্টার বিহীন সিগারেট বা বিড়ি কিনতে সক্ষম।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উপর কর বৃদ্ধির মাধ্যমে ধূমপানের হার হ্রাস করা গেলেও, বাংলাদেশের তেমন কার্যকরী হয়নি কারণ, দাম বাড়লে সস্তা কোম্পানির সিগারেট বেছে নেয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা।

বর্তমানে প্রচলিত “বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন” টি ২০০৫ সালে প্রণয়ন ও কার্যকর করা হয়, যা জনসমক্ষে ধূমপান নিষিদ্ধ করলেও বাড়িতে ধূমপানের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয় না। বাংলাদেশ সরকার ধূমপান বিরোধী বহুল সংখ্যক প্রচারণা ও কার্যক্রম পরিচালনা করলেও, বাসগৃহে পরোক্ষ ধূমপান কমিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করেনি।

পলিসি অপশনস

বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব থেকে শিশুদের মুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত নীতিমালায় দেশজুড়ে বিদ্যালয় ভিত্তিক সচেতনতামূলক প্রচারণা মিডিয়াতে প্রচারণা এবং সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করার কথা ভাবা হয়েছে।

কঃ স্বেচ্ছায় ধূমপানমুক্ত বাসগৃহ গড়ার উদ্দেশ্যে পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে শিশুদের ক্ষমতায়ন

ক.১ঃ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে শিশুদের ক্ষমতায়নের জন্য বিদ্যালয় ভিত্তিক প্রচারণা যা তাদের মা-বাবার ধূমপান কমাতে কাজ করবে। প্রতি উপজেলায় প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের মাধ্যমে ভিডিও ক্লিপ, তথ্য শিক্ষা ও যোগাযোগ সামগ্রী সমৃদ্ধ শিক্ষা মডেল ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিক্ষিত করার পাশাপাশি পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে যাতে তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে তাদের বাবা মাকে এ বিষয়ে জানাতে পারে। পাঠ্যবইগুলোতে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অধ্যায় যুক্ত করতে হবে। ঢাকায় একটি বিদ্যালয় ভিত্তিক গবেষণা থেকে দেখা যায় এরকম কার্যক্রমের মাধ্যমে ধূমপানমুক্ত বাসগৃহের সংখ্যা ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের তামিলনাড়ুতে বিদ্যালয়ভিত্তিক স্বাস্থ্যশিক্ষা প্রচারণা কার্যক্রম থেকে প্রায় একইরকম কার্যকরী ফলাফল পাওয়া গেছে।

ক.২ঃ বিদ্যালয়গামী শিশুদের বাবা- মায়েদের পরোক্ষ ধূমপানের ভয়াবহতা সম্পর্কে শিক্ষাদান। শিক্ষকরা পরোক্ষ ধূমপান ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে বাবা-মায়েদের সচেতন করার কার্যক্রমও পরিচালনা করবেন। প্রতি তিন মাসে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিশুদের ওপর পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর বিষয় নিয়ে বাবা-মায়েদের শিক্ষিত করার জন্য একটি বৈঠকের আয়োজন করবেন। বৈঠক চলাকালে প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগের সামগ্রীসমূহ বাবা-মায়েদের সরবরাহ করা হবে।

খঃ মিডিয়াতে প্রচারণা

পরোক্ষ ধূমপানে শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষতির উপর গুরুত্ব দিয়ে গ্রাফিক্সে স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ ও ধূমপান বিরোধী বিজ্ঞাপন প্রচার। সব রেডিও ও টিভি চ্যানেলে দিনে অন্তত তিনবার এবং প্রতিটি চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে ছবি শুরুর আগে এই বিজ্ঞাপনগুলোর প্রচারিত হবে। একই বার্তা সম্বলিত বিজ্ঞাপন সকল প্রধান দৈনিক সংবাদপত্র এবং বিলবোর্ডে এক বছর ধরে প্রকাশ করা হবে।

গঃ করপ্রদান নীতি সংস্কার করে তামাকের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি।

তামাকের কর বৃদ্ধি এবং নীতি সংস্কারের উদ্দেশ্যটি সব ধরণের বিড়ি সিগারেটের ভিত্তি মূল্যের উপর প্রভাব ফেলবে। তামাকের উপর কর বৃদ্ধি যে সামগ্রিকভাবে ধূমপানের হার কমিয়ে আনার একটা অন্যতম কার্যকরী উপায় এটা ভালোভাবে প্রমাণিত। এবং এটাই বাড়িতে শিশুদের পরোক্ষ ধূমপানের মুখোমুখি হওয়া কমিয়ে আনতে পারে। কমদামী ব্র্যান্ডের ভিত্তিমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোক্তাদের এক ব্র্যান্ড থেকে অন্য ব্র্যান্ড বেছে নেবার সুযোগ বন্ধ করে দেবে। হিসেব বলছে, বিড়ি-সিগারেটের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি করলে স্বল্প মেয়াদের ১৪ শতাংশ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ৯শতাংশ ধূমপান ব্যবহার কমে যাবে এবং পরবর্তী ৪০ বছরে সাকুল্যে ৮০ লক্ষ অকালমৃত্যু ঠেকানো যাবে।

সুপারিশ ও ভবিষ্যতে করণীয়

  • মাথাপিছু প্রতি শিশুর জন্য ৩২/- টাকা খরচ করে পরোক্ষ ধূমপানের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিদ্যালয় ভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম সবচাইতে ভালো উপায়, যার ফলশ্রুতিতে বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের মুখোমুখি হওয়া শিশুদের সংখ্যা ২০ লাখের নিচে কমে আসবে এবং তারা আর এর মুখোমুখি হবে না।

  • যদিও তামাকের উপর কর বৃদ্ধি খুবই ব্যয় সাশ্রয়ী উপায়, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা সম্ভব নাও হতে পারে। বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম বরং বাবা-মাকে স্বেচ্ছায় বাড়িতে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগে উৎসাহী করে তুলবে এবং শিশুদের মধ্যে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করবে।

আসুন কাজ শুরু করি

  • এই নীতিতে সমর্থন ও সহায়তা দিতে সংশ্লি­ষ্ট মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সকলকে কর্মমুখী সংলাপের আহ্বান

  • সংশ্লি­ষ্ট মন্ত্রণালয় (যেমন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, অর্থ এবং শিক্ষা) থেকে একজন যথাযোগ্য ব্যাক্তিকে নির্বাচিত করে এই নীতিটিকে এগিয়ে নিতে তাকে সংবেদনশীল ও প্রত্যয়ী করে তোলা

পলিসি অপশনের প্রয়োগ

পলিসি অপশনসমূহের উপযোগিতা