ডা. আহমেদ রায়হান শরীফ, আইইডিসিআর; ডা. আশেক আহম্মেদ শহীদ রেজা, আইইডিসিআর; ডা. মো. নুরুল ইসলাম, আইইডিসিআর
মূল বার্তা
• ঔষধে সাড়া প্রদানকারী যক্ষার ৪০% এবং ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষার ৮০% অশনাক্ত থেকে যায় যা সমাজের জন্য হুমকি স্বরূপ
• কেবল মাত্র একজন সক্রিয় পালমোনারি টিবি রোগী বছরে ১০ থেকে ১৫ জনকে সংক্রমিত করতে পারেন
• সংক্রমণ ও উপসর্গ বিষয়ে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রয়েছে
• প্রচার মাধ্যমে প্রচারণা, জনগণকে যক্ষার লক্ষণ ও উপসর্গ সম্পর্কে এবং পরীক্ষার জন্য কোথায় যেতে হবে তা শেখাতে পারে
• এই প্রচারণার মাধ্যমে মাত্র ৭০০ বাংলাদেশি টাকায় অতিরিক্ত ৩২ হাজার রোগী শনাক্ত করা যেতে পারে
সমস্যার বিবরণ
বাংলাদেশ বিশ্বের সবচাইতে যক্ষ্মা ভারাক্রান্ত দেশগুলোর মাঝে অন্যতম। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ১৯৯৩ সাল থেকে প্রত্যক্ষ কেমোথেরাপি স্বল্প মেয়াদী কোর্স (ডটস) চালু করেছে। যদিও বস্তিবাসীদের জন্য ডটস সেবার এখনো খানিকটা ঘাটতি রয়ে গেছে। পালমোনারি টিবি বা যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের ৮১% এবং চিকিৎসায় সাফল্যের ৯৩% থাকা সত্ত্বেও শনাক্তকরণে বিলম্ব ঘটায় রোগ ছড়ানোর হার বেড়ে চলেছে।
শহরের বস্তি এলাকাগুলো অধিক হারে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বস্তি এলাকায় ঘনবসতি, অপুষ্টি, অপ্রতুল আলো বাতাস এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই ঝুঁকি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। মানুষ তার আবাসস্থল বা কর্মস্থল উভয় ক্ষেত্রেই আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্ব যক্ষ্মা প্রতিবেদন ২০১৭ অনুযায়ী ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ২২৩৯২১ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। তাদের মধ্যে ২২২২৪৮জন ছিলেন নতুন অথবা পুনরায় আক্রান্ত রোগী তবে ওই একই বছরে বাংলাদেশের হিসেব অনুযায়ী ৩৬০০০০জন রোগী ছিল। এতে করে শনাক্তকরণের দুই পরিসংখ্যানের মাঝে একটি ফারাক লক্ষ্য করা যায়। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ২০১৭ এর হিসেব অনুযায়ী ৩৯% ঔষধে সাড়া প্রদানকারী এবং ৮০% ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর হদিস পাওয়া যায় না।
শনাক্তকরণ ও তথ্য জ্ঞাপনের বাধা হিসেবে মানব সম্পদের অপ্রতুলতা, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার ঘাটতি, যক্ষ্মা নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান বা সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক নেতিবাচক ধারণাকে চিহ্নিত করা হয়।
পলিসি অপশনসমূহ
যদিও জাতীয় যক্ষ্মা কর্মসূচি সারা দেশজুড়ে যক্ষা প্রতিরোধকল্পে প্রচারণা বা ক্যাম্পেইন চালিয়ে থাকে তবুও সকল জনগোষ্ঠীতে আশানুরূপ সচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এসকল তথ্য সংগ্রহে আরও জোর দিতে হবে।
যক্ষ্মা সপ্তাহ পালন
-এই পলিসিটির মূল ভিত্তি হলো যক্ষ্মা সপ্তাহ পালনের মধ্য দিয়ে শহর এলাকার নীতি প্রণয়নকারীদের মাঝে যক্ষা রোগ নির্ণয় বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
-এই সপ্তাহটিতে গণমাধ্যম টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র এবং অন্যান্য মুদ্রণ মাধ্যমগুলোতে (বিলবোর্ড, পোস্টার, ফ্লায়ার, ব্রশিয়ার) ব্যাপক আকারে প্রচারণা চালানো হবে। যক্ষা সপ্তাহকে আরও গুরুত্ব দিতে শহরের সুনির্দিষ্ট এলাকায় আরো নানারকম সচেতনতামূলক কার্যক্রম যেমন র্যালি, সচেতনতা ক্যাম্পেইন করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে 'ছোট ডাক্তার কর্মসূচি' ক্যাম্পেইন চালানো, টেলিভিশন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোর সম্পৃক্ততা বাড়ানো, সেলিব্রিটি বা তারকাদের সম্পৃক্তকরণ, লিফলেট বিতরণ এবং মোবাইল ফোনে সচেতনতা মেসেজ প্রেরণ করা হবে। এই ক্যাম্পেইনে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হবে ক্লিনিক্যাল উপসর্গের সাথে দুই সপ্তাহের কফ এবং অন্যদের মাঝে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকির উপর। উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে জরুরি উপসর্গ চেনাতে এবং পরীক্ষা করানোর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে যক্ষ্মা সপ্তাহ সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি সামাজিক ভ্রান্ত বা নেতিবাচক ধারণার নির্মূল ও যক্ষ্মার ঔষধ পূর্ণ কোর্সে শেষ করার উপায় খুঁজতে সাহায্য করবে।
-বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩৬.৫% শহরে বাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে গনমাধ্যমের প্রচারণা প্রায় ৭১% শহুরে লোকের কাছে পৌঁছাতে পারে। যক্ষ্মার ঝুকি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাবের ক্যাম্পেইন মানুষকে তাদের যক্ষ্মা আছে কি নেই বা অবস্থাটা সম্পর্কে জেনে নিতে আগ্রহী করে তুলবে।
-সম্ভাব্যতা মাঝারি থেকে উচ্চ। মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে একজন যক্ষ্মা রোগী নির্ণয়ে প্রায় ৭০০ বাংলাদেশী টাকা খরচ হবে। যদিও নির্ণয় করার আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও মানব সম্পদেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সারমর্ম ও পরবর্তী পদক্ষেপ
-বাংলাদেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে টিবি শনাক্তকরণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ
-গণমাধ্যমে টিবি সপ্তাহ ক্যাম্পেইন একটি কার্যকরী ও সম্ভাবনাময় উদ্যোগ
-এই নীতিতে উচ্চমাত্রায় শনাক্তকরণের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি
-এই নীতিতে বাড়তি শনাক্তকৃত রোগীর জন্য বাড়তি চিকিৎসা ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি