Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশে দুর্ঘটনায় হতাহত শিশু

ডা. নওরোজ আফরিন, আইইডিসিআর

 

 

বিশ্বব্যাপী দুর্ঘটনায় আহত হবার ঘটনা উদীয়মান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে কারণ বিশ্বে বছরে মোট মৃত্যুবরণের ৯ শতাংশই আহত হবার কারণে ঘটে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিদিনে ১৪,০০০ মৃত্যুর মাঝে কয়েক ডজন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে, কয়েকশত জরুরী ব্যবস্থার আওতায় আনার পর আর কয়েক হাজার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পর মারা যান। এই হতাহত হবার ঘটনা সব বয়সীদের ওপরই প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে অল্পবয়সী ও কর্মক্ষম বয়সের মানুষের ওপর। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী ৫-১৪ বছর বয়সী শিশুদের মাঝে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৩৬০৪ জন, ডুবে গিয়ে ৭৪,৭১২ জন এবং অগ্নিকা-ে ৪১,৫৭৫ জন প্রাণ হারায়। দুর্ঘটনাজনিত হতাহতের কারণে শিশু মৃত্যুর হার উচ্চ আয়ের দেশগুলোর চেয়ে নিম্নআয়ের দেশগুলোতে ৫ গুণ বেশি।

২০১৬ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও হতাহত হবার ঘটনার জরিপ থেকে দেখা যায়, সদ্যজাত শিশুমৃত্যুর ৩.২%, ১-৪ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর ৫২.৬%, ৫-৯ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪২.১%, ১০-১৪ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর ৫৬.৯% এবং ১৫-১৭ বছর বয়সীদের মৃত্যুর ৬০.৭% কারণ দুর্ঘটনায় আহত হওয়া, যা থেকে শিশুদের বয়স বৃদ্ধির সাথে এই কারণটিরও ঊর্ধ্বগতি সহজে বোধগম্য।

পানিতে ডুবে যাওয়া (১০০,০০০ জনে ২৫.৭ জন) শিশু মৃত্যুর সবচেয়ে মারাত্মক কারণ। এরপরেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, পড়ে যাওয়া, সহিংসতা ও দগ্ধ হওয়া। আহত হবার ঘটনা ৫-৯ বছরের শিশুদের মাঝে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

নির্ভরশীল হবার কারণে বড়দের চেয়ে ছোটরা অধিক দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে থাকে। এর পেছনে ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে শিশুদের বয়স, লিঙ্গ, মায়ের বয়স, শিক্ষা, ঘরের বাইরে কর্মরত মা, পরিবারের ধরণ, পরিবারের আয়, বড়দের পক্ষ থেকে দেখেশুনে রাখার ব্যবস্থাসহ নানারকম জনতাত্ত্বিক ও আর্থসামাজিক বিষয়। এছাড়াও শিশুরা নানারকম কৃত্রিম সমস্যার মুখোমুখি হয় যেমন, ঘনবসতিপূর্ণ আবাসে খেলাধুলার জায়গার অভাব, উন্মুক্ত আগুনসহ রান্নাঘর যা মোটেও আলাদা করা নয়, অনিরাপদ ঘরবাড়িতে বেষ্টনীহীন জানালা, ছাদ, সিঁড়ি, খোলা জলাধার, সহজলভ্য বিষাক্ত দ্রব্য, কীটনাশক ও ওষুধপত্র যেগুলো অনিরাপদ উপায়ে মোড়কজাত ও সংরক্ষণ করা হয় এবং নিকটবর্তী সড়ক যা দরিদ্র শিশুদের দুর্ঘটনায় ফেলার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিশুই এই পরিবেশে বেড়ে ওঠে। নিরাপদ ও ঝুঁকি এড়িয়ে চলার জ্ঞানের অভাব এবং প্রাথমিক চিকিৎসাসহ জরুরী স্বাস্থ্যসেবার অভাবও  পরিলক্ষিত হয়। অধিকন্তু সরকারের তরফ থেকে প্রতিরোধমূলক সেবাব্যবস্থার ঘাটতিও রয়েছে। তার পরেও ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড  রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) নামের একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দেশের কিছু এলাকায় উপরে উল্লেখিত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কিছু প্রতিরোধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কিছু প্রশিক্ষণ কাজ চলছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর এর সহযোগিতায় নরসিংদী জেলার বেলাবোতে মাঠ পর্যায়ের একটি গবেষণাগার স্থাপন করেছে। যেখানে দুর্ঘটনাসহ অসংক্রামক রোগের নজরদারি করা হয়। কিন্তু এগুলো নিতান্তই অপ্রতুল। শিশুদের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচাতে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।