Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৩১st জানুয়ারি ২০২৩

টিউবারকিউলোসিস (যক্ষা) থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা

ডা. মল্লিক মাসুম বিল্লাহ, আইইডিসিআর; ডাঃ আহমদ নওশের আলম, আইইডিসিআর; ডা. একরামুল হক, ডিজিএইচএস

 

মূল বার্তা

• বাংলাদেশের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীবৃন্দ একদল সীমিত ও মূল্যবান জনসম্পদ

• সাধারণ জনগণের চাইতে এরা টিবিতে সংক্রমিত হবার তিনগুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন

• চারটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় সেখানে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের ৫৪% লেটেন্ট/সুপ্ত যক্ষায় আক্রান্ত

• বার্ষিক স্ক্রিনিং ও চিকিৎসার মাধ্যমে প্রথম বছরেই বক্ষব্যাধি হাসপাতালের কর্মীদের টিবি সংক্রমণের ভার ৮৪% লাঘব করা যায়

• স্ক্রিনিং ও চিকিৎসার পাশাপাশি এন-৯৫ সুরক্ষা মাস্ক এর যথেষ্ট সরবরাহ ও ব্যবহার পুনঃ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে

সমস্যার বিবরণ

বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর প্রধানতম কারণগুলোর মাঝে যক্ষ্মা সপ্তম, যেখানে ২০১৭ সালের হিসেবে ৫৯,০০০ মৃত্যু ঘটেছিল। একই সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায় নতুন ২,৪৪,২০১জন সংক্রমিত ব্যক্তিসহ তৎকালীন মোট প্রায় ৩৬৪০০০ যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। দেশের তেরোটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ১২০০-এরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিনিয়ত অন্তর্বিভাগ বা বহির্বিভাগে সেবা প্রদানকালে জটিল বা জটিলতাহীন এবং একাধিক ঔষধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শে আসেন। এই পেশায় থাকার কারণে সাধারণ জনগণের চাইতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত হবার তিনগুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, চারটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ৫৪% স্বাস্থ্যকর্মী (যাদের মধ্যে ল্যাবরেটরি বা গবেষণাগারের কর্মী, প্রশাসনিক কর্মী, চিকিৎসক, সাহায্যকারী, নার্স এবং ফার্মাসিস্ট রয়েছেন) সুপ্ত টিবিতে ভুগছেন। প্রায় ৫-১০% ক্ষেত্রে দুই বছরের মধ্যে এরা সক্রিয় টিবি সংক্রমণে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলেন। এইসব স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সক্রিয় টিবি অন্যান্য সংক্রামক হাসপাতাল ও সাধারণ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে সুপ্ত টিবি নির্ণয় করা খুবই সহজ, যদিও হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত স্ক্রিনিং ও রিপোর্টিং সিস্টেমে কোন সুবিধা নেই। উপরন্তু সুপ্ত টিবি চিকিৎসায় মাত্র একটি ঔষধ লাগে বলে চিকিৎসা অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী, কিন্তু সক্রিয় টিবিতে একাধিক ঔষধের প্রয়োজন হয়।

এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার স্বাস্থ্যকর্মীদের টিবি সংক্রমণ প্রতিরোধের একটি সহজ উপায়। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রতিটি স্বাস্থ্যকর্মীর উচিত প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা প্রদানকালে একটি মাস্ক ব্যবহার করা। বর্তমানে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম (এনটিপি)-এর অধীনে এসব হাসপাতালে চাহিদার বিপরীতে মাত্র ২০% এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়। এই অপ্রতুলতা স্বাস্থ্যকর্মীদের আরো ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়।

বাংলাদেশ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষাজনিত মৃত্যুর ৯৫% এবং যক্ষ্মা সংক্রমণের প্রকোপ ৯০% কমিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকায় যদিও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্ক্রিনিং ও এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কিন্তু দেশে যক্ষার ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে সুপ্ত সংক্রমণের বিষয়টি অবহেলিতই থেকে গেছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের পূর্ণ সুরক্ষার জন্য এই নির্দেশিকার সম্পূর্ণ ও সঠিক বাস্তবায়নকে জাতীয় পর্যায়ে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

পলিসি অপশনস

স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে সুপ্ত যক্ষা সংক্রমণ হ্রাসে নিয়মিত স্ক্রিনিংসহ চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণই হলো অপশন। সুপারিশকৃত তিনটি পৃথক পলিসি অপশনগুলো হল (১) স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তিসহ মাস্কের সরবরাহ ৬০% বৃদ্ধি, (২) মাস্ক সরবরাহ ছাড়াই স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি, (৩) স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি ছাড়াই মাস্ক সরবরাহ ৬০% বৃদ্ধি।

১। স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তিসহ মাস্কের সরবরাহ ৬০% বৃদ্ধি

কিঃ

সুপ্ত ও সক্রিয় যক্ষ্মা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে সকল স্বাস্থ্যকর্মীর (বয়স, সেবা প্রদানের সময় ও উপসর্গ অবিবেচ্য ধরে) বাৎসরিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং যাদের মধ্যে যক্ষা পাওয়া যাবে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ। সংক্রমণ রোধে এন-৯৫ মাস্ক এর সরবরাহ ৬০% বৃদ্ধি। যথাযথভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, চর্চায় আনার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা।

সম্ভাব্যতাঃ

বেশি। এই নীতিটি বর্তমানের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা অনুসরণ করে

২। মাস্ক সরবরাহ বৃদ্ধি ছাড়াই স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি

কিঃ

স্বাস্থ্যকর্মীদের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা স্ক্রিনিং এবং সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা। এন-৯৫ সুরক্ষা মাস্ক সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে না।

সম্ভাব্যতাঃ

বেশি। সুপ্ত বা সক্রিয় যক্ষায় সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণের বোঝা কমালেও মাস্ক সরবরাহ বৃদ্ধি করা না হলে আরোগ্যলাভকৃত স্বাস্থ্যকর্মীদের পুনঃসংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে।

৩। স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তি ছাড়াই মাস্ক সরবরাহ ৬০% বৃদ্ধি

কিঃ

এন-৯৫ সুরক্ষা মাস্কের সরবরাহ ৬০% বাড়ানোর সাথে যথাযথভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ চর্চায় রাখার জন্য প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা।

সম্ভাব্যতাঃ

বেশি। স্ক্রিনিং ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়া সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীদের বোঝা কমবে না কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে নতুন করে যক্ষা সংক্রমণের হার কমাবে।

 

সুপারিশসমূহ

আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে এই রোগের ভার লাঘবে নিয়মিতভাবে সুপ্ত ও সক্রিয় যক্ষা স্ক্রিনিং ও চিকিৎসার ব্যবস্থা খুবই সম্ভাবনাময় ও কার্যকরী অপশন। এর সাথে আমাদের উচিত এন-৯৫ মাস্ক এর সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধি করা যা পরবর্তীতে সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করবে। এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য যেসব বক্ষব্যাধি হাসপাতালে রোগী ধারণ ক্ষমতা বেশি সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন

• মন্ত্রণালয় হতে এনটিপি এর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া

• এনটিপি যাতে এই নীতি বাস্তবায়ন করতে পারে সেজন্য মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট সম্পদ বরাদ্দ করা

• তেরোটি বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এই নীতি বাস্তবায়নের দ্বিমাসিক নজরদারি ও তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করা

• স্বাস্থ্যকর্মীদের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতে বক্ষব্যাধি হাসপাতালগুলোর মাঝে পূর্ণ অংশীদারিত্ব বিরাজমান হওয়া