Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশী রোগীদের জিনগত ত্রুটিসমূহ নির্ণয়

মোছা. নূরজাহান বেগম, আইদেশি,ডিইউ; সুপ্রভাত কুমার সরকার, আইদেশি,ডিইউ; মো. তারিকুল ইসলাম, আইদেশি; গোলাম সারয়ার ভুঁইয়া, আইদেশি; তাহমিনা শিরিন, আইইডিসিআর; এম এ হাসানাত, বিএসএমএমইউ; শরীফ আখতারুজ্জামান, ডিইউ; সৈয়দ সালেহীন কাদরী, আইদেশি; ফিরদৌসী কাদরী, আইদেশি,আইসিডিডিআর,বি; কায়সার মাননূর, আইদেশি

পটভূমি:

জন্মের সময় থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতাকে জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম বলে যা শিশুদের মানসিক প্রতিবন্ধকতার অন্যতম প্রধান কারণ। পৃথিবীতে প্রতি ৩০০০-৪০০০ জনের মধ্যে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত আর বাংলাদেশে এই রোগের হার প্রতি ১৩০০ জনে ১ জন। শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ থাইরয়েড গ্রন্থির গঠনগত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত আর বাকি ১৫-২০ ভাগ ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোন তৈরির প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা যায়। শতকরা ১৫-২০ ভাগ ক্ষেত্রে জিনগত কারণে এই রোগ হয়ে থাকে এবং সর্বমোট ১১টি জিন এই রোগের সাথে সম্পর্কিত। এগুলোর মধ্যে থাইরয়েড পারক্সিডেজ (টিপিও) জিন এবং থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন রিসেপ্টর (টিএসএইচ আর) জিন অন্যতম। টিপিও-তে মিউটেশন হলে হরমোন তৈরির প্রক্রিয়ায় সমস্যা হয় আর টিএসএইচআর-এ মিউটেশন হলে থাইরয়েড গ্রন্থির গঠনগত সমস্যা হয়। যেহেতু বাংলাদেশে নবজাতক শিশুদের জিনগত রোগ নির্ণয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, এর ফলে এই রোগ দেরিতে ধরা পড়ে এবং এর জিনগত কারণ সম্পর্কেও তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

গবেষণার উদ্দেশ্য:

এই গবেষণার উদ্দেশ্য হলো থাইরয়েডের হরমোন তৈরীর সমস্যার পেছনে টিপিও জিনের মিউটেশন দায়ী কি না তা খুঁজে বের করা এবং আমিষের ত্রিমাত্রিক গঠনের উপর এই মিউটেশনের প্রভাব আছে কিনা তা অনুসন্ধান করা। এছাড়াও  টিএসএইচআর জিনের মিউটেশনের সাথে থাইরডের অসুখের সম্পর্ক আছে কি না তা নির্ধারণ করা।

পদ্ধতি ও উপকরণ:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে তালিকাভুক্ত মোট ৫৬ জন জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে আক্রান্ত শিশুকে গবেষণার জন্য নেয়া হয়েছিল। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নমুনা হিসাবে ৩ মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করার পর সেগুলো থেকে ডিএনএ আলাদা করা হয়। টিপিও এবং টিএসএইচআর জিনের নির্দিষ্ট প্রাইমারগুলি ব্যবহার করে পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রিএকশন) করা হয়। যেহেতু আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল টিপিও জিনের হটস্পট অংশটি শনাক্ত করা, তাই আমরা মোট ১৭টি এক্সন-এর মধ্যে এক্সন ৮ থেকে ১৪ পর্যন্ত এবং টিএসএইচআর জিনের জন্য মোট ১৩টি এক্সন-এর মধ্যে এক্সন ৯ থেকে এক্সন ১০ পর্যন্ত পিসিআর করি। পিসিআর প্রক্রিয়ার পরে স্যাঙ্গার সিকোয়েন্সিং  পরিচালনা করা হয় এবং মিউটেশন নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বায়োইনফরম্যাটিকস টুলস ব্যবহার করে সিকোয়েন্সিং ডেটার বিশ্লেষণ করা হয়।  

ফলাফল:

৫৬ জন রোগীর মধ্যে ৩৬ জন্য রোগীর থাইরয়েড হরমোন তৈরির প্রক্রিয়ায় সমস্যা ছিল আর বাকি ২০ জনের ছিল থাইরয়েড গ্রন্থির গঠনগত সমস্যা। টিপিও জিন মিউটেশন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ৩৬ জন রোগীর মধ্যে ১৩ জনের ৮নং এক্সনে; ৬ জনের ১২নং এক্সনে এবং ১৭ জনের ৮ এবং ৬ উভয় এক্সনে এই মিউটেশন ছিল। এই মিউটেশনগুলো হচ্ছে সি.১১১৭জি>টি (পি.  এএলএ৩৭৩এসইআর), সি.১১৯৩জি>সি (পি.এসইআর৩৯৮টিএইচআর), সি. ২১৪৫সি>টি (পি.পিআরও৭১৫পিআরও) এবং সি.২১৭৩এ> সি (পি.টিএইচআর৭২৫পিআরও)। টিপিও প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠনে এই মিউটেশনগুলোর কোন ক্ষতিকারক প্রভাব আছে কিনা তা পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করা হয়। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে স্বাভাবিক প্রোটিনের তুলনায় মিউট্যান্ট প্রোটিনে ‘লিগ্যান্ড বাইন্ডিং এফিনিটি’র পরিবর্তন হয়েছে। টিএসএইচআর জিনের ক্ষেত্রে ১০ নং এক্সনে ৩টি মিউটেশন পাওয়া যায়। এগুলো হলো সি.১৫২৩ সি>টি (পি.এসইআর৫০৮ এলইইউ),সি.২১৬১জি>সি (ভিএএল৭২১ এলইইউ) এবং সি.২১৮১জি>সি (পি.জিএল ইউ৭২৭এএসপি)। এই মিউটেশনগুলোর মধ্যে সি.১৫২৩ সি>টি (পি.এসইআর৫০৮ এলইইউ)- এটিকে রোগ সৃষ্টিকারী নতুন মিউটেশন হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই মিউটেশনের কি প্রভাব থাকতে পারে তা এখনো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

উপসংহার:

জন্মগত হাইপোথাইরয়েড রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশী রোগীদের জিনগত মিউটেশন জানা থাকলে তার সাথে রোগ সংশ্লিষ্ট জটিলতার কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা ভালভাবে বোঝা যাবে এবং রোগীদের চিকিৎসার কৌশল নির্ধারণ করতেও সাহায্য করবে।