Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মোবাইল ফোন ভিত্তিক রোগ পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি - বাংলাদেশে একটি অনন্য উপাত্ত সংগ্রহ পদ্ধতি

ডা. ইকবাল আনসারী খান, সোশাল মেডিসিন বিভাগ, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

 

 

বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবায় যে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তার প্রতিফলন দেখা যায় মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, রোগ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য টিকা প্রদানের হার এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার মধ্য দিয়ে। এর সবই সম্ভব হয়েছে সরকার ও তার উন্নয়ন সহযোগীদের প্রমাণ নির্ভর কর্মকান্ডের অবিরাম সমন্বিত প্রচেষ্টায়। নতুন কর্মসূচি বা নীতিমালা তৈরি, কর্মসূচি তদারকি, অগ্রগতি দেখা বা কর্মকান্ডের প্রভাব পরিমাপ করার জন্য সার্বক্ষণিক নজরদারীর গুরুত্ব অপরিসীম আর এর জন্য তথ্য সংগ্রহ একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ১৯৭৬ সাল থেকে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক রোগের নজরদারী, প্রাদুর্ভাব তদন্তকারী এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্র্ণ রোগ সমূহের ওপর গবেষণা পরিচালনাকারী হিসেবে একটি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।


 

আইইডিসিআর বর্তমানে হাসপাতাল ভিত্তিক নজরদারী, কমিউনিটি ভিত্তিক নজরদারী, ওয়েব বেজড বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে রোগ নজরদারী এবং ইভেন্ট বেজড বা ঘটনাভিত্তিক নজরদারীর কাজ করছে। এর পাশাপাশি আইইডিসিআর বাংলাদেশে সেল (মোবাইল) ফোন ভিত্তিক রোগ নজরদারী (সিপিবিডিএসএস) কার্যক্রমের পথিকৃৎ হিসেবে ২০১২ সাল থেকে এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের তথ্যসহ, আচরণগত ঝুঁকি এবং মহিলাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। স্বল্প সময়ে, অতি অল্প খরচে বিশাল সংখ্যক উত্তরদাতার কাছ থেকে তথ্যসংগ্রহ করা যায় বলে টেলিফোনের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণ একটি সহজ ও নির্ভরযোগ্য উপায় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, স্কটল্যান্ড ও চীনের মত অনেক উন্নত দেশ নিয়মিত টেলিফোন সার্ভে পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মধ্যেও মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার কমিউনিটি ভিত্তিক সরাসরি তথ্য সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হয়ে উঠেছে বলে আইইডিসিআরও এ পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহী হয়েছে। সম্ভবপর স্বল্পতম সময়ে পরিবর্তন অবলোকনের সুযোগ দেবার সাথে সাথে যথাসময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণে সাহায্য করে বলে এই প্রকল্প খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আইইডিসিআর পরিচালিত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জরিপে অংশ নেয়া উত্তরদাতাগণ দেশের ৫টি মোবাইল অপারেটরদের মধ্য থেকে যেকোন একটির ব্যবহারকারী। দৈবচয়নের মাধ্যমে প্রত্যেক অপারেটরের ব্যবহারকারীর সংখ্যার ভিত্তিতে তৈরী পুলভূক্ত নাম্বার থেকে একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে উত্তরদাতাদের নির্বাচন করা হয়। এরপর এই নির্বাচিত নাম্বার পৌঁছে যায় সংযুক্ত মোবাইল ফোনে। তখন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নাম্বারটিতে কল দেন, কার্যক্রমের উদ্দেশ্য জানিয়ে মৌখিক সম্মতি নিয়ে উত্তরদাতাকে নির্দিষ্ট প্রশ্নগুলো করেন এবং সাথে সাথে উপাত্তসমূহ কম্পিউটার সফটওয়ারে তুলে রাখেন। এই জরিপে অংশগ্রহণ সম্পূর্ন স্বেচ্ছামূলক এবং অংশগ্রহণকারী চাইলে যেকোন সময় সাক্ষাৎকার থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। সংগৃহীত সকল তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রেখে সংরক্ষণ করা হয় এবং আরও বিস্তৃত পরিসরে প্রচারের ক্ষেত্রে উপাত্তগুলোর সামষ্টিক ও সামগ্রিক বিশ্লেষণ করা হয় যার ফলে নিশ্চিতভাবে এইসব ফলাফল ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিহ্নিত করার কোন উপায় থাকে না। সকল কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে এই গোপনীয়তার ব্যাপারে অবহিত করা হয়। আইইডিসিআর বেশ কিছু সংখ্যক তথ্য সংগ্রহকারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে পুলভুক্ত করে রেখেছে। নির্দিষ্ট কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের ধরণ এবং পরিমাণ অনুযায়ী তথ্য-সংগ্রহকারীদের ডেকে নিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং তারপরই তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়। সংগৃহীত উপাত্ত প্রতিটি কম্পিউটারের পাশাপাশি আইইডিসিআর -এর সার্ভারেও সংরক্ষণ করা হয়। উপাত্ত প্রবেশনাকালে সম্ভাব্য ভুল এড়াতে সফটওয়্যার-এ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আছে। এছাড়াও উপাত্তের মান নিশ্চিত রাখতে আইইডিসিআর-এর পরিসংখ্যানবিদগণ নিয়মিত এগুলো বিশ্লেষণ করে থাকেন।


 

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জরিপ পদ্ধতিটি অসংক্রামক রোগ, আঘাত ও প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগে আক্রান্তদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও আচরণগত ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০১২ সালে আইইডিসিআর কর্তৃক পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রথম ব্যবহার করা হয়। এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসমূহের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএএনপিএইচআই এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (ইউএস-সিডিসি)। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থানুকূল্যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জরিপ থেকে সংগৃহীত তথ্যের শুদ্ধতা প্রমাণের জন্য একই প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে সংগৃহীত উপাত্তসমূহ, মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একদল উত্তরদাতার উত্তরের সাথে যাচাই করা হয়। অধিকাংশ নির্দেশকের ক্ষেত্রেই ফলাফলের গ্রহণযোগ্য সংবেদনশীলতা ও নির্দিষ্টতা পরিলক্ষিত হয়।

পরীক্ষামূলক এবং শুদ্ধতা যাচাইয়ের সমীক্ষা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা এই পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহকে আরও বৃহৎ পরিসরে পরিচালনার জন্য আইইডিসিআরকে উৎসাহিত করেছে। দেশব্যাপী যাতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে মোবাইলের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নজরদারী কার্যক্রম চালানো যায় সেজন্য মোবাইল অপারেটরদের সংশ্লিষ্টতা ও তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন গ্রাহকগণের প্রয়োজনীয় সংখ্যক নাম্বার পাবার উদ্দেশ্যে আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটারী কমিশন (বিটিআরসি)-এর চেয়ারম্যানের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে, এই কার্যক্রমের গুরুত্ব স্পষ্ট করতে এবং অন্যদেরও এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করতে আইইডিসিআর, এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিফোন অপারেটর অব বাংলাদেশ (মোবাইল ফোন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি) কে সঙ্গে নিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সাথে কয়েক দফায় পরামর্শ সভার আয়োজন করে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় ২০১৪ সালে ইউএস সিডিসি ও ফুড এন্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও) এর আর্থিক সহযোগিতায় যথাক্রমে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ এবং খাদ্যবাহিত রোগের সিনড্রোমিক (লক্ষণভিত্তিক) নজরদারীর কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও খাদ্যবাহিত অসুস্থতার পরিমাণ ও সংক্রমণের মৌসুম সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য তিন দফায় উপাত্ত সংগৃহীত হয়। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)-এর আর্থিক সহযোগিতায় আইইডিসিআর ২০১৬-১৭ সালে ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর দুটি জরিপ চালায়। এই জরিপের মুখ্য বিষয়গুলো ছিল বিয়ের সময় বয়স, প্রথম গর্ভধারণের বয়স, গর্ভকালীন সেবাগ্রহণ সম্পর্কে তথ্যজ্ঞান ও চর্চা, প্রসব সংক্রান্ত পূর্বপ্রস্তুতি, প্রসবকালীন যত্ন, পরিবার পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের অভ্যাস, প্রসব সংশ্লিষ্ট অসুস্থতা/জটিলতা ইত্যাদি। এই জরিপ সারা দেশেই চালানো হয়। তারমধ্যে কতিপয় সুবিধাবঞ্চিত জেলা যেখানে সরকারি উদ্যোগে প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নীতকরণের কার্যক্রম চলছিল সেখানে এই জরিপের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। চলমান কার্যক্রমের গতি প্রকৃতি ও প্রভাব পর্যবেক্ষণ করাই ছিল এই জরিপের লক্ষ্য। আমাদের দেশের নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে শক্তিশালী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও স্বল্পমূল্যে কার্যকরী কর্মসূচি তৈরিতে নীতি নির্ধারকদের সাহায্য করাও এই জরিপের উদ্দেশ্য ছিল।

অসংক্রামক রোগ ও এর ঝুঁকি বিষয়ে ২০১৬ সালে আইইডিসিআর, “স্বাস্থ্য-জনসংখ্যা- পুষ্টি খাতে উন্নয়ন কর্মসূচি”র আর্থিক সহযোগিতায় একটি মোবাইল ফোন ভিত্তিক জরিপ চালায়।

২০১৭ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে আইইডিসিআর মোবাইল ফোন ভিত্তিক তাৎক্ষণিক জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপের উদ্দেশ্য ছিল চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত এলাকার বিস্তার, আক্রান্ত ব্যক্তি, রোগের লক্ষণ, ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহ করা। সংগৃহীত উপাত্ত সমূহ ঐ প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছিল। ২০১৭ সাল থেকে অসংক্রামক ব্যাধি ও এর ঝুঁকিসমূহের বিষয়ে সময়মত সঠিক তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে জন হপকিনস্ ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর ব্লুমবার্গ ফিল্যানথ্রোপিস এর “ডেটা ফর হেলথ ইনিশিয়েটিভ”-এর সাথে যৌথভাবে আইইডিসিআর “ইভ্যালুয়েশন অব মেকানিজমস্ টু ইমপ্রুভ মোবাইল ফোন সার্ভে মেট্রিকস্”-নামে একটি গবেষণা শুরু করে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জরিপ পদ্ধতিসমূহের মূল্যায়ন, মানোন্নয়নের কৌশল এবং অসংক্রামক রোগ জরিপে, এর শুদ্ধতা, সম্ভাব্যতা ও মানদ-ের পরিমাপ ও উন্নয়ন করা।

আইইডিসিআর এই প্রোটকলটি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন ভিত্তিক সার্ভিলেন্স প্লাটফর্ম “কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউ বা সিএটিআই অর্থাৎ কম্পিউটার এর সহায়তায় টেলিফোনের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণ”-এর সাথে “স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্বে ধারণকৃত প্রশ্ন শুনে মোবাইলের কি-বোর্ড চেপে উত্তর দেয়ার পদ্ধতি”-এর তুলনা করার জন্য, যাতে, আইভিআর এর জরিপ কাজ আরও উন্নত করা যায়, এবং মোবাইলে পরিচালিত জরিপের পদ্ধতি দুটির মধ্যে নির্দিষ্ট সূচক দ্বারা পার্থক্য নিরুপণ করা যায়। সিএটিআই জরিপগুলোতে সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য কল সেন্টারের মাধ্যমে কিছু প্রশিক্ষিত ব্যক্তি নিয়োগ করা হয়, যারা একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রামের পান্ডুলিপি ব্যবহারের মাধ্যমে উত্তরদাতাদের প্রশ্ন করে থাকে এবং প্রাপ্ত উত্তরগুলো লিপিবদ্ধ করে। এক্ষেত্রে উত্তরদাতারা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ব্যক্তিটির সাথে সরাসরি কথা বলে প্রশ্ন বুঝে নিতে পারেন। আর আইভিআর পদ্ধতিতে উত্তরদাতারা তাদের উত্তরগুলো দেন কম্পিউটারের ডেটাবেজে পূর্বেধারণকৃত প্রশ্ন শুনে শুনে, যেখানে প্রশ্নসমূহের নির্ধারিত উত্তর, ক্রমানুসারে ফোনের কীবোর্ডের সাথে সমন্বিত থাকে ( যেমন- হ্যাঁ হলে ১ চাপুন বা না হলে ৩ চাপুন)। আইভিআর পদ্ধতিতে র‌্যানডম ডিজিট ডায়ালিং-এর মাধ্যমে একই সাথে একাধিক কল করা যায় এবং তার উত্তর লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়। জন হপকিনস্ আইভিআর এর জরিপ কাজের জন্য “ভোটো” মোবাইল নামের একটি প্লাটফর্ম নির্দিষ্ট করেছিল (যা এখন “ভিয়ামো” নামে পরিচিত)।


 

২০১৭ সালে এই প্রকল্প জন হপকিনস্ এবং আইইডিসিআর, আইভিআর প্লাটফর্মের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখে যা বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতায় আইভিআর-এর ব্যবহারোপোযোগিতা এবং সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা ব্যাখ্যায় সাহায্য করে। এই পুরো কার্যক্রমের উৎকর্ষ সাধনে এবং এ সম্পর্কে নীতিনির্ধারক মহলের মতামত গ্রহণের জন্য আইইডিসিআর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয়-কেন্দ্রিক সাক্ষাৎকার, নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা এবং আংশিক কাঠামোবদ্ধ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিল। এই জরিপ কাজটি আরও সুচারু করতে চূড়ান্ত পর্যায়ে নানা রকম কৌশল যাচাই করা হয়েছিল। এগুলো থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে, ২০১৮ সালে আইইডিসিআর দেশ-নির্দিষ্ট ও পরিমার্জিত “আইভিআর প্লাটফর্ম” ব্যবহার করে অসংক্রামক রোগ ও আচরণগত ঝুঁকি নজরদারীর ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে বর্ষব্যাপী একটি জরিপ পরিচালনা শুরু করে। জাতীয় পর্যায়ে এই জরিপ থেকে অসংক্রামক রোগের আচরণগত ঝুঁকির একটা হিসেব পাওয়া যাবে যা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের বিদ্যমানতা নির্র্ণয় করতে সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি আইইডিসিআর অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে এর ব্যয় বিশ্লেষণ ও উপাত্ত দৃশ্যমান হবার কাজটিও করবে। এর ফলাফল ভবিষ্যতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জরিপ চালানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য যোগাবে।

ক্রমবর্ধমান মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা, বাড়ী বাড়ী গিয়ে উত্তরদাতার সাথে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার-এর বদলে ফোনের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের জনগণের মাঝে স্থানীয় পর্যায়ে স্বল্প সময়ে জরিপ চালানোর জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবহার একটি কার্যকরী পন্থা হিসেবে এখন প্রমাণিত। আইইডিসিআর অন্যদেরও এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ভবিষ্যতে কমিউনিটি থেকে সরাসরি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে দ্রুত জরিপ পরিচালনায় উৎসাহিত করে থাকে। ভবিষ্যতে সম্ভবপর দ্রুততম সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে জনগণের মতামত পেতে এবং তাদের জন্য নীতি নির্ধারণ, যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এই পদ্ধতিটি সহায়ক হবে বলে আইইডিসিআর আশা রাখে।