ইকবাল আনসারী খান, ফারজানা ইসলাম খান, তাহসিন শাহরিন খান;
রোগতত্ত¦, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর);
নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগসমূহ বেড়েই চলেছে। বিশ্বের অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর প্রায় ২৮ মিলিয়ন (৭৫%) মৃত্যুই হয় এই দেশগুলোতে। শারীরিক পরিশ্রম না করা, সুষম খাবার না খাওয়া, মদ পান, ধূমপান এবং তামাকের ব্যবহার ইত্যাদি অভ্যাস এ সমস্ত রোগের ঝঁুকি বাড়ায়। অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমানো ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ বিষয়ক নীতি নির্ধারক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সময়োপযোগী ও সঠিক তথ্য পাওয়া জরুরী। সাধারনত ঐ সকল তথ্য বাড়ি বাড়ি যেয়ে জরিপের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে, যা সময় সাপেক্ষ এবং অনেক ব্যয়বহুল হওয়ায় সব সময় করা সম্ভব হয় না, ফলশ্রুতিতে এই জরিপগুলো প্রয়োজন থাকলেও বেশ কয়েক বছর পর পর করা হয়।
বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদেরকে বাড়িতে না যেয়েও সমাজের সকল স্তরের মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছে; যা অসংক্রামক রোগ বিষয়ক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে ব্যক্তিগত পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের পথ সহজ করেছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগতত্ত¦, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ২০১২ সাল থেকে মোবাইল ফোন ভিত্তিক রোগ নিরীক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট আচরণগত তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে যা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সহায়ক।
এই দীর্ঘ সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জনগণের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ, প্রজনন স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পানি বাহিত রোগ, রোগীর ফলো—আপ, ইত্যাদি বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট অবস্থা সম্পর্কিত জরিপ পরিচালিত হয়েছে। আইইডিসিআর এ সমস্ত কার্যক্রমে IANFI, UNFPA, UNICEF, FAO, Bloomberg Philanthropies, BMGF, JHU, LSTMH, BTRC, সকল মোবাইল অপারেটর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ে কার্যক্রমে সহযোগী হিসাবে পেয়েছে। মোবাইল ফোন ভিত্তিক জরিপ পরিচালনাকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় — এ বিষয়ে আইইডিসিআর এবং জন্স্ হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয় ২০১৫ সাল থেকে একত্রে কাজ করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আইইডিসিআর বর্তমানে কয়েকটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে —
১. বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার স্টেপস কার্যক্রমের অনুকরণে র্যানডম ডিজিট ডায়ালিং পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনে ইন্টারভিউয়ার পরিচালিত জরিপের (CATI) মাধ্যমে বাংলাদেশের আট বিভাগের বিভিন্ন জেলার ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক, যাদের মোবাইল ফোন আছে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অংসক্রামক রোগ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ে তথ্য নেয়ার জন্য ”মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ” কার্যক্রম শুরু করেছে। এই গবেষণার উদ্দেশ্য হলো দেশে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির অবস্থার মূল্যায়ন। এই জরিপটি জন্স্ হপকিন্স বিশ^বিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর সহযোগীতায় আইইডিসিআর ০৯ নভেম্বর, ২০২৩ থেকে পরিচালনা করছে। এই কার্যক্রমে ২০২২ সালে সমগ্র বাংলাদেশে পরিচালিত মুখোমুখি জরিপ কার্যক্রমের মত অন্ততঃ সাত হাজার ছয়শত আশি জন মানুষের কাছ থেকে ফোন করে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। একই সাথে, ২০২২ সালে সমগ্র বাংলাদেশে পরিচালিত মুখোমুখি জরিপ কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে তুলনা করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গৃহীত তথ্যের বৈধতা এবং নির্ভরযোগ্যতা যাঁচাইয়ের চেষ্টা করা হবে।
২। এছাড়া আইইডিসিআর ঢাকার একটি উপজেলার গ্রাম ও শহর এলাকা থেকে কমপক্ষে নয়শত ষাট জন ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক, যাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যাবে তাদের সম্মতি সাপেক্ষে প্রথমে মুখোমুখি জরিপ(face to face), তারপর ফোনের মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ার পরিচালিত জরিপ (CATI) এবং সর্বশেষে ফোনের মাধ্যমে কম্পিউটার পরিচালিত জরিপ(IVR) করা হবে। উল্লেখ্য যে, এই তিনটি জরিপে একই জনগোষ্ঠির কাছ থেকে একই রকম প্রশ্নমালা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময় পর পর তিনভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং আহরিত তথ্যের বৈধতা এবং নির্ভরযোগ্যতা যাঁচাইয়ের চেষ্টা করা হবে।
৩। বিভিন্ন দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মুল্যায়নের জন্য একটি সার্ভে—টুল তৈরী ও তা যাচাই করার জন্য আরো একটি গবেষণা কর্যক্রম আইইডিসিআর বর্তমানে পরিচালনা করছে। এ গবেষণায় গুণগত মান এবং মোবাইল ফোন ভিত্তিক জরিপ— উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এ গবেষণায় কারিগরী এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে Resolve to Save Lives (RTSL)।
আরও উল্লেখ্য যে, ১৮ বছরের বেশী বয়সী সকল বাংলাদেশী নাগরিক যাদের, অন্তত একটি চালু মোবাইল ফোন আছে (নিজের অথবা পরিবারের যেটা তিনি ব্যবহার করতে পারেন) এবং এই জরিপে অংশগ্রহণে সম্মত হবেন, শুধুমাত্র তারাই এই গবেষণা সমূহে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আহরিত তথ্য সামষ্টিকভাবে প্রকাশিত হবে, অংশগ্রহণকারীগণের পরিচয় কোথাও প্রকাশ করা হবে না। আর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আহরিত সকল মূল্যবান তথ্য জনস্বার্থে ব্যবহৃত হবে।