অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম, ডা. নাসরিন নাহার, ডা. মোঃ শাহরিয়ার মাহবুব, অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস
Author Email: rowshanhakim@gmail.com
অস্টিওপোরোসিস বা হাড় হালকা ও ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া একটি নীরব আগ্রাসী প্রক্রিয়া। এতে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় ক্ষয়ে যায়। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ তাদের জীবনের জন্য ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং একইসাথে তাদের মধ্যে ভিটামিন ডি এর অভাবও লক্ষ্য করা যায়। এই দুটিই এসব দেশে উদীয়মান একটি মুখ্য জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে। উন্নত দেশের চাইতে উন্নয়নশীল দেশের নারীদের এই হাড় ক্ষয়জনিত সমস্যার প্রবণতা অনেক বেশি। বাংলাদেশে বসবাসরত নারীদের উপর এই বিষয়ে কোন সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া বেশ দুষ্কর। এই উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশের প্রজননক্ষম বয়সের মহিলাদের মাঝে একটি পরিসংখ্যান বা গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল।
ঢাকা শহরে অবস্থিত একটি বড় সরকারি হাসপাতালের (সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) স্ত্রীরোগ ও পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিকে (যেখানে সাধারণত শহুরে ও শহরতলীর নিম্নবিত্ত রোগীরা সেবা গ্রহণ করে থাকেন) আগত ৫০০ জন ১৬ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মহিলাদের উপর ২০১০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৬ মাসব্যাপী একটি ক্রস সেকশনাল গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এই সকল মহিলাদের হাড়ের মধ্যে খনিজ উপাদানের ঘনত্ব পরিমাপ করা হয়। এটি নির্ধারণ করার জন্য লাম্বার কশেরুকা ও পায়ের বড় হাড়ের একটি বিশেষ জায়গায় ডুয়েল এক্স রে এবসর্পশিওমেট্রি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। কুপার সার্জিক্যাল কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত কাট-অফ পয়েন্ট ব্যবহার করে এই মহিলাদের অস্টিওপেনিয়া বা হাড়ের কম ঘনত্ব নির্ধারণ করা হয়। এছাড়াও অস্টিওপেনিয়া এবং অস্টিওপোরোসিসের মাঝে কোরিলেশন নির্ধারণ করার জন্য ১৬ থেকে ৪৫ এবং ৪৬ থেকে ৬৫ বছর বয়সের গ্রুপের মহিলাদের মাল্টিভেরিয়েবল লজিস্টিক রিগ্রেশন এনালাইসিস করা হয়।
অংশগ্রহণকারী মহিলাদের মধ্যে ৩১০ জন ছিলেন ১৬ থেকে ৪৫ বছর এবং ১৯০ জন ছিলেন ৪৬ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সদ্য বিবাহিত, গৃহবধূ, অধূমপায়ী, সপ্তাহে ১২০ মিনিটের বেশি কায়িক পরিশ্রম না করা এবং তারা গড়ে ৫.৩ বছর স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। গড়পড়তায় তাদের পারিবারিক মাসিক আয় ছিল ১০,০০০ টাকা বা তার অধিক। বিএমআই ছিল সাধারণ সীমার মধ্যে, গড়ে চারবার তারা গর্ভ ধারণ করেছিলেন, ২.৫ বছর ধরে মুখে খাওয়ার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেছিলেন, ০.৮ বছর ডিএমপিএ ইনজেকশন নিয়েছিলেন এবং তাদের ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল ১৩ বছর বয়সে। এই সকল মহিলাদের নিকটাত্মীয়ের মধ্যে ১৩% উচ্চতা হ্রাস ও ১১.৬% হাড় ভাঙ্গার ইতিহাস পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ৪৩.৬% ও ৫.৫% - ১৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মহিলার এবং ৪০.৭% ও ৪১.৮% - ৪৬ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মহিলার অস্টিওপোরোসিস ও অস্টিওপেনিয়া পাওয়া যায়। এই রোগের সাথে বিএমআই নেতিবাচকভাবে এবং বয়স ইতিবাচকভাবে সম্পর্কিত ছিল।
এই গবেষণায় মাঝ-বয়সী মহিলাদের অস্টিওপোরোসিসের হার পাশ্চাত্য ও অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হাড়ের সঠিক ঘনত্ব বজায় রাখার জন্য সঠিক খাদ্য গ্রহণের একটি ভূমিকা রয়েছে। এটির অভাব, পক্ষান্তরে নারীদের হাড় ভাঙ্গার একটি স্বতন্ত্র ঝুঁকিপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। হাড়ের ঘনত্বের সাথে পুষ্টিদায়ী ক্যালসিয়াম ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও কিছু অন্যান্য উপাদান, যেমন প্রোটিন ও ভিটামিন সি এর অভাবের প্রমাণও পাওয়া যায়। এই বিষয়গুলি অবশ্য এই প্রতিবেদনে তদন্ত করে দেখা হয়নি এবং এটি এই গবেষণার একটি সীমাবদ্ধতা বলে গণ্য করা যেতে পারে।
বর্তমান গবেষণাটি প্রজননক্ষম মাঝ-বয়সী মহিলাদের কোমর ও নিতম্বের হাড়ভাঙ্গা কমিয়ে আনতে অস্টিওপোরোসিস ও অস্টিওপেনিয়া নির্ণয় ও প্রতিরোধের কর্মসূচি গ্রহণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করছে। অল্প বয়সী মেয়েদের উদ্দেশ্যে প্রচার মাধ্যমগুলোতে এই বিষয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সর্বজনীনভাবে দেখা যায় যে, প্রজননক্ষম মহিলাদের ভিটামিন ডি এর অভাব খুবই সুস্পষ্ট। তাই এটি নির্ণয় ও চিকিৎসার যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। মেয়ে শিশু এবং অল্প বয়সী নারীদের জন্য যথাযথ ইন্টারভেনশন কর্মসূচি নেওয়া হলে ভবিষ্যতে তারা অস্টিওপোরোসিস এবং তার থেকে উদ্ভুত হাড় ভাঙ্গার রোগ থেকে বহুলাংশে রেহাই পাবে বলে ধারণা করা যায়।