ডা. হাসনাত সুজন, এম-হেলথ প্রজেক্ট, আইইডিসিআর
উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ!!!
ক্রমবর্ধমান হারে বিশ্বের বহুদেশ শিক্ষা বিস্তার, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রান্তিক উপাত্ত সংগ্রহ, প্রান্তিক পর্যবেক্ষণ, যোগাযোগ ও প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রোগের প্রাদুর্ভাব তদন্ত এবং রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে মোবাইল যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। উগান্ডা, জার্জিয়া ও ভারতে এইচআইভি/এইডস বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে লিখিত ও ভিডিও বার্তা ব্যবহার করা হয় । সহজভাবে বললে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সেবার খাতে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহারই এম-হেলথ প্লাটফর্ম। স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতা ও প্রদানকারী উভয়ের মাঝে একটি বহনযোগ্য যন্ত্র (যেমন- মোবাইল ফোন ও ট্যাবলেট পিসি)-এর ব্যবহার তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রত্যয়ন এবং পরিবহন করে উভয়প্রান্তের ব্যবহারকারীকে রোগীর নিরাপত্তা ও উৎকৃষ্ট মানের সেবা প্রদানে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে ধরে নেয়া হয়।
আমাদের দেশে যেখানে তিন চতুর্থাংশ জনগণ মোবাইল ফোনের অধিকারী এবং প্রায় শতভাগ বিস্তৃত নেটওয়ার্কের আওতায় আছেন, সেখানে এই এম-হেলথ প্লাটফর্মটি একটি সরল বাস্তবতা। এম-হেলথ-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিসেবা আরও সহজতর, গ্রহণযোগ্য ও সহজপ্রাপ্য হয়ে ওঠায়, স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ও প্রেরণের ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। অন্যান্য প্রচলিত সেবার মত এম-হেলথ প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নয় বরং এটি ব্যবহারকারী -কেন্দ্রিক প্লাটফর্ম।
এই প্লাটফর্মের আওতায় একজন ব্যবহারকারী কেবলমাত্র তার মোবাইল থেকে কয়েকটি নম্বর ডায়াল করে (যেমন, ৯৯৯ যে কোন সেবা বা ১৬২৬৩ স্বাস্থ্যসেবা) খুব সহজেই সংকটাপন্ন (দূর্ঘটনা, পুড়ে যাওয়া, তীব্র পেট ব্যথা ইত্যাদি) কিংবা খুব জরুরি নয় (মাথাব্যথা, ঠান্ডা, সর্দি, কফ ইত্যাদি) উভয় অবস্থাতেই সাহায্য সেবা পাওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
এম-হেলথ এর সম্ভবপর কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য ২০১৫ সালে নেত্রকোনায় একটি গবেষণা চালানো হয়। এরই ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণে আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি এবং ফ্লোরিডা বিশ্ব- বিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ২০১৮ সালে এম-হেলথ প্লাটফর্মের ব্যবহার উদরাময় রোগের ক্ষেত্রে প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে চলায় কতটা কার্যকর তা বোঝার জন্য একটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়। দুটি দলের মধ্যে এই ট্রায়ালটি করা হয়।
একদলের জন্য ছিল প্রচলিত কাগজের ব্যবস্থাপত্র ও অন্যদলের জন্য ছিল এম-হেলথ-এর মাধ্যমে সেবা প্রদান। পরীক্ষণীয় বিষয়গুলো ছিল শিরাপথে তরল সরবরাহ, নির্দেশিত এ্যন্টিবায়োটিক এবং জিঙ্ক-এর ব্যবহার বৃদ্ধি। প্রস্তাবিত এন্ড্রয়েড উপযোগী এম-হেলথ এ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রান্তিক এলাকা থেকে উদরাময় সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারকদের সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছিল সে বিষয়টিও এই গবেষণায় মূল্যায়িত হয়।
বিদ্যমান উদরাময় তথ্য সরবরাহের ভিত্তিতে পাঁচ জোড়া হাসপাতালকে নির্বাচিত করা হয়। প্রতি জোড়া হাসপাতালের মধ্যে একটিকে নির্বাচন করা হয় প্রচলিত কাগুজে ব্যবস্থাপত্রের জন্য, যেখানে বহুদিন ধরেই এই রকম ব্যবস্থা চলে আসছে যদিও হাতে লেখা পদ্ধতিতে হিসেব করাটা জটিল, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। আর অন্য হাসপাতালটিকে নির্বাচন করা হয় এন্ড্রয়েড পদ্ধতির স্মার্ট ফোনে এম-হেলথ এ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে পানিশূন্যতা নিরূপণ, প্রয়োজনীয় তরল ও ওষুধ প্রদানের নির্দেশনা দেয়ার জন্য। একজন রোগীর একেবারেই নিজস্ব স্বাস্থ্যাবস্থা নিরূপণ এবং সে অনুযায়ী পারস্পারিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে যদি চিকিৎসা দেয়া যায় (যেমন পানিশূন্যতায় কতটা তরল কিভাবে দিতে হবে বা হিসেবের পরিবর্তন আনতে হবে ইত্যাদি) তাহলে অবশ্যই সেটা অনেক বেশিমাত্রায় ও দ্রুত কার্যকর হবে যা শুধুমাত্র এই মোবাইল প্লাটফর্মের দ্বারাই সম্ভব।
দেশব্যাপী নীতি নির্ধারকেরা এটাই বলে থাকেন যে উদরাময়ে শিরাপথে অতিরিক্ত তরল প্রদান এবং এ্যন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার এখন একটি উদ্বেগের বিষয়। তাই এই ট্রায়ালটি যদি সফল হয় এবং সকল হাসপাতালে এম-হেলথ ব্যবস্থা চালু করা যায় তাহলে নির্বিচারে ওষুধ ও তরল গ্রহণ অবশ্যই কমে আসবে। ফলশ্রুতিতে এ্যন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স-এর ভয়াবহতা ও স্বাস্থ্য খাতের ব্যয়ভার অনেকটাই লাঘব হবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষিত উপাত্তগুলো খুবই সম্ভাবনাময় যা এই এম-হেলথ বা মোবাইল প্লাটফর্মকে আমাদের ভবিষ্যত স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য অপরিহার্য হিসেবে প্রতীয়মান করছে।