বাংলায় অন্ত্রের রোগ, সহজ করে বললে উদরাময় (কলেরা ও ডায়ারিয়া) বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে অসুস্থতা ও মৃত্যুর বড় একটা কারণ। এর জন্য দায়ী মূলত প্রয়োজনীয় তথ্যজ্ঞান ও দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের স্বাস্থ্য বুলেটিন বলছে এই রোগেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায় প্রতি বছর বিশ্বে ২৯ লক্ষ উদরাময়ে আক্রান্তের মাঝে ৯৫,০০০ এবং বাংলাদেশে ১,০০,০০০ আক্রান্তের মাঝে, ৪,৫০০ মৃত্যুবরণ করে। যে পরজীবির কারণে এ রোগ হয় তার মধ্যে ‘সালমোনেলা’ ও ‘শিগেলা’ প্রজাতি দুটিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। সারা দেশে সঠিক তথ্যের অভাবেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল দুষ্কর হয়ে রয়েছে। সম্প্রতি ‘২০৩০-এর মাঝে কলেরা নির্মূলে বিশ্ব রোডম্যাপ’ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে সেখানে জাতীয় পর্যায়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে এই রোগমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করা। তাই বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও কক্সবাজার জেলার ১০টি হাসপাতালে ২০১৪-এর মে মাসে এক সমীক্ষা শুরু হয়েছিল।
প্রতি সপ্তাহে প্রতি কেন্দ্রে আগত ১০ জন রোগীকে এই সমীক্ষার অন্তর্ভূক্ত করা হয় যাদের ২৪ ঘন্টার মাঝে ৩ বা ততোধিক বার পাতলা পায়খানা হয়েছে বা ২৪ ঘন্টায় ৩ বারের কম পাতলা পায়খানা হয়েছে সাথে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে অথবা ২৪ ঘন্টায় অন্তত একবার রক্ত পায়খানা হয়েছে। এদের কাছ থেকে অসুস্থতার তথ্যের পাশাপাশি আর্থসামাজিক ও ব্যক্তিগত তথ্যও তাদের অনুমতি সাপেক্ষে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে।
নির্ধারিত নিয়মে পায়খানা পরীক্ষা করে ‘ভিব্রিও কলেরি’ ‘সালমোনেলা’ ‘শিগেলা’ ও ‘ইসচেরিশিয়া কোলাই’ (ই-কোলাই)’-এর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। ২০১৫-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪০৬৪টি মল-এর নমুনা পরীক্ষা করে ৮.১৯% এর মাঝে কলেরার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয় যাদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক এবং মহিলাদের সংখ্যা বেশি ছিল। সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া যায় চট্টগ্রামে, সবচেয়ে কম ঠাকুরগাঁওয়ে।
অন্যদিকে ই-কোলাই শনাক্ত করা যায় ৩.৩৫% নমুনায়, যার ৫.৫৯% ঢাকায় আর ০.৫৯% সাতক্ষীরায়। শতকরা ২ভাগের বেশি নমুনায় পাওয়া যায় ‘শিগেলা’ আর ১% ‘সালমোনেলা’। এদের সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় নরসিংদী ও ঢাকার উত্তরা থেকে। বেশিরভাগ দ্বৈতসংক্রমণ ছিল ভিব্রিও কলেরি ও ই-কোলাই-এর কারণে।
এইসব পানিবাহিত পেটের অসুখ বা কলেরার জন্য দায়ী পরজীবী বা জীবানুগুলোর উপস্থিতি সারা বাংলাদেশে জরিপ চালিয়ে শনাক্ত করা গেছে। গবেষকরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করণের মাধ্যমে সময়মত চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, যা সামাজিক সচেতনতা, নিরাপদ পানির ব্যবহার, পয়নিষ্কাশন ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি প্রণয়নের পাশাপাশি স্বতঃস্ফূর্ত-স্বপ্রণোদিত টিকাদান কর্মসূচি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।