Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ঢাকায় বারবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব

ডা. এএসএম আলমগীর, প্যারাসাইটোলজি বিভাগ, আইইডিসিআর

 

 

গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে। ১৭৭৯-৮০ সালে এশিয়ায় প্রথম মহামারী দেখা দেবার অনেক বছর পর বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে প্রথমবারের মত ডেঙ্গুর প্রকোপ নথিভুক্ত করা হয় যা ‘ঢাকা জ্বর” নামে পরিচিত। ২০০০ সালের মাঝামাঝিতে আবারও ডেঙ্গুজ্বর / ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেবার ঢাকা চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৫৫৫১ জন পূর্ণবয়স্ক রোগীর সন্ধান পাওয়া যায় যেখানে মৃত্যুহার ছিল প্রায় ১.৭% (৯৩ জন) । আসলে ডেঙ্গু রোগীর প্রকৃত সংখ্যা ঠিকমত পাওয়া যায় না আবার অনেক ক্ষেত্রে অন্য রোগের উপসর্গের সাথে মিলিয়ে ভুল করা হয়।

‘এডিস ইজিপ্টি’ নামক মশকীবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঢাকায় কয়েক বছর ধরে বহাল থাকলেও এ বছর আরো ব্যাপক ও ভয়ঙ্করভাবে দেখা দিয়েছে। সারা বছর এ রোগের ঝুঁকি থাকলেও মৌসুমি বর্ষায় এর বিস্তার বেশি হয়। ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি ধরন বা সেরোটাইপ আছে (ডিইএন ১ থেকে ৪ পর্যন্ত) যা দিয়ে এই রোগ ছড়ায়।

ডেঙ্গুর উপসর্গগুলো অনেকটা ফ্লু-এর মত, হঠাৎ তীব্র জ্বর (১০৪-১০৫ ফারেনহাইট), সাথে চোখের পিছনে তীব্র ব্যথা, মাংসপেশী, অস্থিসন্ধি এবং হাড়ে ব্যথা, তীব্র মাথা ব্যথা, চামড়ায় লাল লাল র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের উপসর্গগুলোর মাঝে রয়েছে তীব্র পেটব্যথা ও ক্রমাগত বমি, ডায়রিয়া, কাঁপুনি, ত্বকে লাল দাগ এবং অনিয়ন্ত্রণযোগ্য রক্তপাত। এসব উপসর্গ রোগীর পুরো রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ধ্বস নামিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। এই ধরনের সমস্যা দ্বিতীয়বার বা পরপর ডেঙ্গু আক্রমণের ক্ষেত্রে বেশি দেখা দেয়। যদি কোন রোগীর আগেও ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে পরের বার জ্বর ওঠার পর দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে যতদূর জানা যায় এখন পর্যন্ত ঢাকায় প্রায় ৪২৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন যাদের মাঝে ৩ জন মারা গেছেন (জুন ৩০, ২০১৮)।

এই রোগ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধের একমাত্র উপায় ভাইরাস বহনকারী মশকী নিধন। আতঙ্কিত হবার কিছু না থাকলেও ছাদ, অব্যবহৃত পাত্র, উঠোন, গাড়ির বাতিল চাকার টায়ার, ফ্রিজ ও এয়ারকন্ডিশনার-এর নিচে, গাছের টব, নারকেলের মালা, নির্মাণাধীন বাড়ি ইত্যাদি স্থানে যেখানে এডিস ইজিপ্টি মশকী ডিম পাড়ে সেখানে ২-৩ দিনের বেশি সময় পানি জমতে দেয়া যাবে না। এ মশা দিনেরাতে কামড়ায়, বিশেষ করে সকালে ও সন্ধ্যায় যেন না কামড়ায় সেজন্য দিনের বেলাতেও মশারী এবং দরজা জানালায় নেট ব্যবহার, ফুলহাতা জামা পরা, মশা নাশক ওষুধ বা তেল, কয়েল, রেপেলেন্ট ও ভ্যাপোরাইজার ব্যবহার করা উচিত। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে অবশ্যই এই রোগ প্রতিহত করা সম্ভব।