Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৭ জুন ২০২৩

মাঙ্কিপক্স

মুশতাক হোসেন, আইইডিসিআর

 

মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাসজনিত প্রাণীজাত (জুনোটিক) রোগ। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের একটি বিজ্ঞানাগারে এক বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রোগ শনাক্ত হয় বলে একে মাঙ্কিপক্স বলা হয়। এ নামটি বদল করে নতুন বৈজ্ঞানিক নাম দেয়ার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ এ নাম থেকে মনে হতে পারে বানরই এ রোগের জন্য দায়ী, যা সঠিক নয়। এ রোগটির প্রাদুর্ভাব ১৯৭০ সাল থেকে প্রধাণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১১টি দেশে দেখা যায়। ইতিপূর্বে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, সিঙ্গাপুরসহ অনান্য দেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। তবে সেসব ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আফ্রিকার দেশ সমূহে ভ্রমণের ইতিহাস অথবা উক্ত দেশ সমূহ হতে আমদানিকৃত প্রাণীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস ছিল। এ বছরের (২০২২) মে মাস থেকে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া,পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়াতে মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়া যেতে থাকে, যারা মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার রোগ উপদ্রুত অঞ্চলে ভ্রমণ কিংবা সেদেশের মাঙ্কিপক্সবাহক কোনো প্রাণির সংস্পর্শেও আসেননি। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে নিবিড় দৈহিক সম্পর্ক/ যৌন মিলনে এ রোগ ছড়াতে পারে। আগে থেকে প্রাদুর্ভাব ছিলনা এমন দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত এ রোগটির সংক্রমণ প্রধানত পুরুষ বিশেষ করে সমকামী পুরুষদের মাঝে পাওয়া যাচ্ছে। মাঙ্কিপক্সে একের অধিকবার সংক্রমণ সাধারণত হয় না। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) এ রোগের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে।

 

এটিই জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলছে। কোনো কোনো জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ধারণা করছেন, হয়তো আগেই এ সবদেশে (ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা) মাঙ্কিপক্সের উপস্থিতি ছিল। এখন কোনো অজানা কারণে তা হঠাৎ করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বের জন্য মাঝারী ধরণের ঝুঁকি বলে চিহ্নিত করেছে।

‘মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে অর্থোপক্স ভাইরাস’। এ জাতির ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে গুটিবসন্ত ও কাউপক্স। এ জন্য মাঙ্কিপক্সের সাথে গুটিবসন্ত বা স্মলপক্সের মিল দেখা যায়। আবার মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের রয়েছে দু’টো ক্লেড বা উপজাতি। একটি হচ্ছে মধ্য আফ্রিকা ক্লেড-এ উপজাতির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যুহার ১০% পর্যন্ত হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকা ক্লেড-এ উপজাতির মাঙ্কিপক্সে মৃত্যু তেমন হয় নি। মাঙ্কিপক্সের সুপ্তিকাল সাধারণত ৬ থেকে ১৩ দিন, তবে তা সর্বনিম্ন ৫ দিন থেকে সর্বোচ্চ ২১ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

 

মাঙ্কিপক্স রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো হলঃ জ্বর (৩৮০ সেন্টিগ্রেডের বেশী তাপমাত্রা), প্রচন্ড মাথাব্যথা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা (লিম্ফ্যাডিনোপ্যাথি), মাংসপেশীতে ব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, ফুস্কুড়ি যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে হাতের তালু, পায়ের তালু সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে (সাধারণত জ্বরের ৩ দিনের মধ্যে)। উপসর্গগুলো সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

 

মাঙ্কিপক্স রোগীর দেহে লক্ষণ দেখা না দিলে রোগী থেকে অন্য কারো মধ্যে ভাইরাসটি ছড়ায় না। শরীরে ফুস্কুড়ি (ভেসিকল, পাস্তিউল) দেখা দেয়া থেকে শুরু করে ফুস্কুড়ির খোসা (ক্রাস্ট) পড়ে যাওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি হতে রোগ ছড়াতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো আপনা আপনি সেরে যায়।

 

এ রোগ থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখার উপায়ঃ

(ক) আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকা;

(খ) আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সেবা প্রদানকারী উভয়ে মাস্ক ব্যবহার করা;

(গ) সাবান পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া (৩০ সেকেন্ড ধরে);

(ঘ) আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যাদি সাবান/ জীবাণুনাশক/ ডিটারজেন্ট দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা;

(ঙ) আক্রান্ত জীবিত/মৃত বন্যপ্রাণী অথবা প্রাকৃতিক পোষক (যেমন ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ) থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা। তবে সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী (যেমনঃ গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগী, মহিষ) থেকে এ রোগ ছড়ায় না।

 

যদিও একাধিকবার আমাদের দেশের প্রেস মিডিয়াতে মাঙ্কিপক্সের দ্বারা আক্রমনের ছবি সহ রোগীর শনাক্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে, এগুলির কোনটিই এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক উপায়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রমানিত হয়নি। জনগনের মাঝে আতঙ্ক ও ভুল বুঝাবুঝি এড়ানোর জন্য আমাদের সকলেরই সরকারী সূত্রের উপর নির্ভরশীল হওয়া প্রয়োজন।