আইইডিসিআর
১। কখন সন্দেহ করবেন আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত?
আপনি যদি গত ১৪ দিনের মধ্যে -
- কোন আক্রান্ত দেশ ভ্রমণ করে থাকেন, অথবা
- করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকেন
এবং আপনার যদি-
জ্বর (১০০০ ফারেনহাইট বা তার বেশি), কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়
২। অ্যান্টিবায়োটিক কি কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা বা প্রতিরোধে কার্যকরী?
- অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাস-এর বিরুদ্ধে নয়, ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী।
- কোভিড-১৯ এক ধরণের ভাইরাস বিধায় এর চিকিৎসা বা প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার কোন কাজে আসবে না।
- তবে, যদি কেউ কোভিড-১৯ দিয়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যাকটেরিয়া থেকে সহ-সংক্রমণের (co-infection) জন্য অ্যান্টিবায়োটিক পেতে পারেন।
৩। কোভিড-১৯ এ কোয়ারেন্টিনকৃত ব্যক্তিও কি রোগ ছড়াতে পারেন?
যিনি কোয়ারেন্টিন অবস্থা পেরিয়ে এসেছেন তাকে রোগ ছড়ানোর জন্য শঙ্কামুক্ত ভাবা যায় কারণ জীবাণুর সুপ্তাবস্থায় তার লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয় নি।
৪। প্রাদুর্ভাবপূর্ণ দেশ থেকে আসা কোন চিঠি বা পার্সেল গ্রহণ করা কি নিরাপদ?
- হ্যাঁ, নিরাপদ।
- ইতিমধ্যে পাওয়া তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা জানি যে মানবদেহের বাইরে এই করোনাভাইরাস বেশিক্ষণ বাঁচে না। সুতরাং প্রাদুর্ভাবপূর্ণ দেশ থেকে আসা কোন চিঠি বা পার্সেল যদি কেউ গ্রহণ করেন তবে তিনি কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বেন না।
৫। যার লক্ষণ-উপসর্গ নেই তিনি কি কোভিড-১৯ ছড়াতে পারেন?
একজন আক্রান্ত রোগী কত দিনের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারবেন তা রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের আরো বিশদ তথ্য প্রয়োজন। সাম্প্রতিক নথিপএের ভিত্তিতে বলা যায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী লক্ষণ প্রকাশের আগেই রোগ ছড়াবার সম্ভাবনা আছে। তবে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে উপসর্গযুক্ত রোগীদের কাছ থেকে ।
৬। ডিম ও গবাদি পশুর মাংস কি খাওয়া যাবে?
- মাংস, ডিম ও মাছ সহ সকল খাবার ভালভাবে রান্না করে খাবেন।
৭। শুধু কি বয়স্করাই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবে, নাকি তরুণরাও ঝুঁকিতে?
- যে কোন বয়সের ব্যক্তি কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন।
- বয়স্ক এবং যাদের আগে থেকে কোন অসুস্থতা (যেমন- অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ) আছে, এমন ব্যক্তি করোনাভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হলে, তাদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব বয়সী মানুষকে ভাইরাস থেকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা (যেমন- হাতের পরিচ্ছন্নতা, শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্যবিধি) মেনে চলতে পরামর্শ দিচ্ছে।
৮। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে নিউমোনিয়া ভ্যাকসিনের কোন ভূমিকা রয়েছে কি?
- না, নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কার্যকরী নয়।
- কোভিড-১৯ সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ভাইরাস হওয়ায় এর জন্য আলাদা ভ্যাকসিন প্রয়োজন হবে।
- বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় গবেষকরা এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন।
৯। রসুন খাওয়া কি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করবে?
- কোভিড-১৯ বিরুদ্ধে রসুন কার্যকর- এমন কোন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
১০। তিলের তেল মাখলে কি শরীরে কোভিড-১৯ প্রবেশ করবে না?
- তিলের তেল কোভিড-১৯ কে ধ্বংস করে না।
- কিছু রাসায়নিক জীবাণুনাশক যেমন- ব্লিচ/ক্লোরিন-ভিত্তিক জীবাণুনাশক, ইথার দ্রবণ, ৭৫% ইথানল, প্যারাসেটিক অ্যাসিড, ক্লোরোফর্ম ইত্যাদি কোন বস্তুর উপরিভাগ থেকে কোভিড-১৯ কে মেরে ফেলতে সক্ষম।
১১। মাউথওয়াশ দিয়ে গার্গল করলে কি কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে?
- না। মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে এমন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। কোন কোন মাউথওয়াশ হয়ত কিছুক্ষণের জন্য আপনার লালায় থাকা অন্যান্য জীবাণুকে মেরে ফেলতে সক্ষম। কিন্তু তার ফলে যে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে তার নিশ্চয়তা নেই।
১২। স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার করে কি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব?
- না। স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার করলে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব এমন কোন নিশ্চিত প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
- দেখা গেছে, স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার করলে সাধারণ ঠান্ডা থেকে দ্রুত উপশম হয়। কিন্তু এর ফলে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ হয় কি না তা জানা যায়নি।
১৩। ‘হ্যান্ড ড্রায়ার’ / আল্ট্রা-ভায়োলেট জীবাণুনাশক ল্যাম্প কি কোভিড-১৯ ধ্বংসে কার্যকরী?
- না, ‘হ্যান্ড ড্রায়ার’ কোভিড-১৯ ধ্বংসে কার্যকরী নয়।
- হাত বা শরীরের অন্য কোন অংশ জীবাণুমুক্ত করার জন্য আল্ট্রা-ভায়োলেট ল্যাম্প ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এর ব্যবহারে ত্বকে সমস্যা তৈরী হতে পারে।
- হাত পরিষ্কারের পর টিস্যু/ পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হাত ভালভাবে মুছে বা উষ্ণ ‘এয়ার ড্রায়ার’ দিয়ে হাত ভালভাবে শুকিয়ে ফেলুন।
১৪। সারা গায়ে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে কি কোভিড-১৯ মেরে ফেলা সম্ভব?
- না, কোভিড-১৯ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে ফেলার পর সারা গায়ে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে একে মেরে ফেলা সম্ভব নয়।
- অ্যালকোহল বা ক্লোরিন জীবাণুনাশক হলেও যথোপযুক্ত নির্দেশনা ছাড়া এগুলো ব্যবহার করা উচিৎ নয়। এ সকল পদার্থ চোখ-মুখ ইত্যাদিসহ কাপড়ের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ সকল জীবাণুনাশক ব্যবহারে সতর্ক হউন।
১৫। মাস্ক কি মেডিকেল বর্জ্য?
- না। জনসাধারণের ব্যবহৃত (চিহ্নিত/রেডজোন ব্যতীত সাধারণ এলাকায় বসবাসরত) মাস্ক মেডিকেল বর্জ্য নয় কিন্তু হাসপাতালে স্বাস্থ্যর্কমীরা রোগী দেখা বা নমুনা সংগ্রহ বা অন্য কোন চিকিৎসা কাজের সময় অথবা মৃতদেহ ব্যবস্থাপনার কালে পরিহিত মাস্ক ফেলে দেবার সময় মেডিকেল বর্জ্য হিসেবে ফেলতে হবে।
১৬। কোভিড-১৯ এর জীবাণু কি খাবারের গায়ে (ফল, সবজি, হিমায়িত খাবার, প্যাকেটকৃত খাবার) বেঁচে থাকতে পারে?
- করোনাভাইরাস খাবারের পৃষ্ঠতলে বংশবৃদ্ধি করতে পারেনা; তাদের তাদের বেঁচে থাকার জন্য জীবন্ত প্রাণী বা মানুষ প্রয়োজন হয় আশ্রয়দাতা হিসেবে।
১৭। ফল ও সবজি কিভাবে ধোয়া উচিত? শুধু পানি না আরো কিছু?
- ফল ও সবজি পানযোগ্য নিরাপদ পানিতে ধুয়ে নেয়াই যথেষ্ট।
১৮। খাবারের প্যাকেটের ওপর করোনাভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে কি? কতক্ষণ? জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা কি আবশ্যক?
- খাবারের প্যাকেট জীবাণুমুক্ত করা অনাবশ্যক, কিন্তু প্যাকেট ধরার পর ও খাবার গ্রহণের আগে হাত যথাযথভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
১৯. মুদি দোকানে ভোক্তারা কি ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করবেন?
- দোকানে প্রবেশের সময় বা ভেতরে অন্যান্য ক্রেতা ও বিক্রয়কর্মীদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। যদি কোন ঝুড়ি বা ট্রলি ব্যবহার করতে হয় তবে ব্যবহারের আগে ও পরে হাতগুলো জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
দোকানে ঢোকার আগে হাত স্যানিটাইজ করে নিতে হবে। দোকানে অবস্থানকালে কাশি শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। কেনাকাটার সময় মুখ, নাক, চোখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাদ্য সামগ্রী সরাসরি স্পর্শ থেকে যথাসম্ভব বিরত থেকে চামচ চিমটা ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব হলে কাগুজে নোট এড়িয়ে স্পর্শহীন উপায়ে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
২০. খাদ্যসামগ্রীর বাজারে যাওয়া কি এখন নিরাপদ? প্রাণীর বাজারে? ভেজা খাবার (মাৎস্য) বাজারে?
- যদি মার্কেটে সকল কর্মী ও ক্রেতাদের কাছ থেকে ন্যূনতম ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা যায়, হাত ধোয়া/ জীবাণুমুক্ত করা যায়, যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায় তাহলে বাজারে যাওয়া নিরাপদ। আরো বিস্তারিত জানতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা গুলো দেখে নিন।